অসহযোগ আন্দোলনের এই দিনে জয়দেবপুরে জনতা এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে ৫০ জন শহিদ হন এবং প্রায় দুই শতাধিক লোক আহত হন। সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণআন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়। জয়দেবপুরের ঘটনায় রাজধানীতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একদিন বিরতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খান তৃতীয় দফা বৈঠক হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ঐ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কোনো সহকারী উপস্থিত ছিলেন না।
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। ভাসানী এদিন বলেন, ইয়াহিয়া অযথা সময় নষ্ট করছেন। তার বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইয়াহিয়ার মনে রাখা উচিত তিনি জনপ্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই। এদিন করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলসমূহের পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো বিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে ভুট্টো গণআন্দোলনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে বলেন, ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের শক্তি দেখেছেন, এবার পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের শক্তি দেখবেন। এদিনও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে কুচকাওয়াজ ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলে।