পটিয়ায় মহিলা ইউপি সদস্যকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এহসানুল হকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের (৭,৮ ও ৯ ওয়ার্ডের) তিনবারের নির্বাচিত মহিলা সদস্য নাছিমা আকতার। একইদিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে পটিয়া থানাকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে অন্য আসামিরা হলেন, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহাম্মদ সায়েম (২৮), ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামশেদ হিরু (৪২), ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি শাহেদুল ইসলাম শাহি (২৫), যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ বেলাল (৩৫) ও মুহাম্মদ মোরশেদ টুলু (৫২)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ (রবিবার) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি চাল বরাদ্দের তালিকা প্রণয়ন ও নলকূপ বরাদ্দ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান এহসানুল হকের নিকট মহিলা ইউপি সদস্য নাছিমা আকতার তার নামে বরাদ্দকৃত ‘নলকুপ কেন বাতিল করা হয়েছে’ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। এ সময় ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সায়েম নারী ইউপি সদস্যকে ‘চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে মারধর করেন’। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেও মহিলা মেম্বারকে চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালে আঘাত করেন এবং ঘুষি মারেন। এসময় ঘুষির আঘাতে মহিলা মেম্বারের চারটি দাঁত পরে গিয়ে মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে আহত মহিলা মেম্বারকে উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে যায়। সেখানে আসামি পক্ষের লোকজন চিকিৎসা নিতে বাধা দিলে আহত মহিলা ইউপি সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শরীফ উদ্দিন বলেন, শোভনদন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান এহসানুল হকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে নাছিমা আকতারের দায়ের করা ফৌজদারি দরখাস্তটি দীর্ঘ শুনানি শেষে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করতে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, এখনও আদালতের নির্দেশনার কপি পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে মামলা দায়েরের পর জীবনের নিরাপত্তাশঙ্কার কারণে পুলিশ প্রহরায় বাড়ি নিয়ে ফিরেছেন মামলার বাদী ও ইউপি সদস্য নাছিমা আকতার।
মামলার এজাহার দায়েরে সময় আসামিরা আদালত চত্বরে তাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ নাছিমার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মামলা করতে গেলে আসামিসহ ১০–১২ জন সন্ত্রাসী আমাকে ঘিরে ধরে। এসময় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তারা বলতে থাকে মামলা দিয়ে তাদের কিছু করতে পারবে না। এ মামলায় কিছুই হবে না।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শরীফ উদ্দিন বলেন, আসামিসহ সন্ত্রাসীরা বাদীকে আদালত থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনলে আদালত মামলার আদেশ দেওয়ার পর বাদী নাছিমা আক্তারকে পুলিশ প্রহরায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালত চত্বরে নাছিমা আক্তারকে বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান, বাংলাদেশ মেম্বার কল্যাণ এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. হাসেম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোহাম্মদ মুসা তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। এর আগে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার কল্যাণ এসোসিয়েশন দক্ষিণ জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।