সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় রেলভবনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ–চন্দ্রনাথ–আদিনাথ) স্রাইন কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বৈঠকে স্রাইন কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সমপ্রীতির পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা। তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক থেকেই তিন উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির সংস্কার প্রয়োজন বলেও জানান কমিটির সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বাসসের।
স্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সিঁড়ি এখন খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তর্বর্তী সরকার সবার জন্য বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণে কাজ করছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, অন্য ধর্মের স্থাপনার ওপর যারা আক্রমণ করে তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ। এ কাজে কোনো ধর্ম নেই, অধর্ম রয়েছে। ধর্মীয় সমপ্রীতি নষ্টের কোনো ধরনের চেষ্টা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই আপনারা নায্য দাবি–দাওয়াগুলো মন্ত্রণালয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চন্দ্রনাথ মন্দিরের সিঁড়ি উন্নয়নের জন্য জেলার এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গতকাল বুধবার রেল মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রেস সচিব বলেন, চন্দ্রনাথ মন্দিরের সিঁড়িটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এখানে সনাতন ধর্মের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। এজন্য সিঁড়িটির উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। শফিকুল আলম বলেন, রেল ভবনে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের আগে মন্দিরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল সড়ক উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছে। তিন উপদেষ্টার সভা থেকেই এলজিআরডি সচিবকে চন্দ্রনাথ মন্দির উন্নয়নের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেস সচিব বলেন, চন্দ্রনাথ মন্দিরকে ঘিরে যেন কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় সেজন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো পক্ষই কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর হাতে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।