খোলা বাজারে শুল্ক ফাঁকির বিদেশি সিগারেট

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ জুন, ২০২১ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

খোলা বাজারে সহজে মিলছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা নামীদামী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট। বিদেশি সিগারেটের ডিপোখ্যাত নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে একপ্রকার প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অভিযান না থাকার কারণে অসাধু আমদানিকারক চক্র শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সিগারেট আনতে উৎসাহী হচ্ছে। ফলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক অসাধু আমদানিকারক কাস্টমস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিদেশি সিগারেটের চালান খালাস করে নিয়ে যায়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ সিগারেটের চালান জব্দ করে তা অত্যন্ত নগণ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, আমদানিযোগ্য সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ স্পষ্টভাবে লিখা থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক সিগারেট আমদানির ক্ষেত্রে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বাংলা ছাড়া অন্য যেকোনো ভাষায় লিখা থাকতে হবে। তবে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের আমদানি করা সিগারেট খোলা বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। তাই খোলা বাজারের বাংলা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ লেখা ছাড়া সিগারেট অবৈধভাবে আনা হচ্ছে এটি সহজেই বলা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন কসমেটিকসের দোকানে ‘ডানহিল’, ‘বেনসন এন্ড হেজেজ’, ‘৫৫৫’ ‘মোর’, ‘ইজি- লাইট’, ‘ইজি স্পেশাল গোল্ড’, ‘মালবোরো’, ‘ওরিস’, ‘ব্লাক’, ‘মন্ড’, ‘৩০৩’ ব্রান্ডের সিগারেট অনেকটা প্রকাশ্য বিক্রি হচ্ছে। এসব সিগারেট প্রবাসী ও অসাধু আমদানিকারকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে হাত ঘুরে বিভিন্ন মোড় এবং পাড়া মহল্লার পান সিগারেটের দোকানে চলে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াকুব দৈনিক আজাদীকে বলেন, রেয়াজুদ্দিন বাজার শুধুমাত্র সিগারেট অনেক পণ্যই চোরাই পথে আসছে। এখন আমার কথা হলো-এসব আসছে কিভাবে? কাস্টমস কী করে? এসব পণ্য প্রবেশপথগুলোতে কড়া নজরদারি করলে তো আসার কথা নয়। আগে মূল জায়গায় হাত দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা একটা পণ্য হাতের নাগালে পাচ্ছেন তাই বিক্রি করছে।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের গত ৪ জুন বন্ড (শুল্কমুক্ত) সুবিধায় প্লাস্টিক হ্যাংগার ঘোষণা দিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি সিগারেট নিয়ে আসে সাভারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভার্সাটাইল অ্যাটায়ার লিমিটেড। ২০ লাখ শলাকা করে ইজি, মল্ড এবং অরিস ব্র্যান্ডের মোট ৬০ লাখ শলাকায় ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয় বলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা জানান। এছাড়া গত ১৬ মার্চ নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার আমদানিকারক জেকে স্টেশনারি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এ-ফোর সাইজের কাগজ ঘোষণায় বিভিন্ন ব্র্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট নিয়ে আসে। কায়িক পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৯৯০ কার্টুন (৪৯ লাখ ৯৮ হাজার) শলাকা ওরিস এবং মন্ড ব্রান্ডের সিগারেট দেখতে পান এআইআর শাখার কর্মকর্তার। বিদেশি সিগারেট আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক ১২ কোটি রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করে। অন্যদিকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্ড সুবিধায় পলিয়েস্টার পিইটি স্ট্র্যাপ ঘোষণা দিয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪৮ লাখ ২৮ হাজার শলাকা বিদেশি সিগারেট নিয়ে আসে পাবনার ঈশ্বরদী এক্সপার্ট প্রসেসিং জোন (ঈশ্বরদী ইপিজেড) এলাকার প্রতিষ্ঠান ফুজিয়ান এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ন্যানো ওরিস, ব্লাক, ডানহিল, ডেভিডোফ ব্র্যান্ডের সিগারেট আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্মকর্তারা। অপরদিকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এ-ফোর সাইজের কাগজ ঘোষণায় নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান করিম ট্রেডিং ৪৬ লাখ শলাকা বিদেশি সিগারেট নিয়ে আসে। সিগারেট আমদানি করে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (এআইআর শাখা) মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা অনেকগুলো সিগারেটের চালান আটক করেছি। এখন কথা হচ্ছে-কাস্টমসের পক্ষে সবগুলো চালান কি আটক করা সম্ভব? অনেকগুলো চালান সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসছে। এছাড়া কিছু আকাশপথে আসছে। জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক বাবুল ইকবাল ব্যস্ত আছেন উল্লেখ করে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নম্বর পাঠিয়ে তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দোলনে যাচ্ছেন চালক সহকারীরা ট্রেন চলাচল বন্ধের শঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাই এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভা