যখন এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কানে আসল মনে একটা ঝড় বয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। কারণ গত দু’দিন হলো আমি করোনা পজেটিভ। সবে মাত্র আমিসহ বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকজন করোনা রোগী। ভেবেছিলাম অন্যান্য মহামারীর মতো করোনা মহামারী আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু বিধির খেলা আমাকেও এর থেকে রেহাই দিল না। আজ আমার করোনা আক্রান্তের বয়স দু’দিন চলে। প্রচুর শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতা, একা এক ঘরে ছিলাম এই দু’দিন। অথচ একা সময় কীভাবে পার করতে হয় আমি জানি না। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীরা আমার কাছে তো দূর আমার বাড়ির কয়েক মাইলের ভিতর থাকলে করোনা ধরবে এরকম একটা ধারণা তাদের। আজ এ্যাম্বুলেন্স এসেছে নিয়ে যেতে আমাকে। কোথায় নিয়ে যাবে কি করবে সবই অজানা, এ্যাম্বুলেন্সের লোকজন আমাকে ডাকছে। আমি দু’জনের সাহায্যে গাড়িতে উঠেছি। ঘোলা কাঁচের ভিতর থেকে দেখছি আশপাশ। চারপাশের বাড়িগুলোর জানালা খুলে দেখছে আমাকে সবাই। করুণ দৃষ্টিতে আমিও দেখছি সবাইকে, এর ভিতর চোখে পড়লো আমার মায়ের মুখখানা কি অদ্ভুত একটা মুহুর্ত! তাকানো যাচ্ছে না মায়ের মুখের দিকে। মুখের ভাষা নিঃশব্দ,শুধু চোখের জলে হচ্ছে কথা। মায়ের চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে, এর মাঝেই গাড়ি চলতে শুরু করবে আমি শুধু শেষে মাকে বুঝিয়ে দিলাম চোখের জল মুছে, যে মা আমি আবার ফিরে আসবো। গাড়ি চলছে তার আপন মনে। এদিকে একটু নিঃশ্বাস ভিতরে নেওয়ার জন্য আমার ভিতরটা যেন তৃষ্ণায় ফেটে যাচ্ছে।
এখন আমি চার দেয়ালবেষ্টিত একটা রুমের মাঝে শুয়ে আছি। নাকে-মুখে নল দিয়ে রেখেছে। কোনো সাড়া শব্দ নেই আমার শুধু বেঁচে আছি।
আজ সপ্তম দিন, আমি এখন পরপারের বাসিন্ধা, আজ সকালেই আমার বিদায় ঘন্টা বেজেছে। ভাবছি মায়ের কথা! না জানি আমার মা কি দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আছে। আমি পারিনি তার কথা রাখতে। আমার ফিরে যাবার কথা ছিল মায়ের কাছে। এরকমই কথা ছিল তার সাথে হয়তো বসে আছে সে রাস্তায়, যেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্স ছেড়েছিল। আমি আর আসবো না মা, নিয়তি আমাকে বিদায় দিয়েছে।