বেঁচে থেকেও মৃত তাঁরা সুস্থ যুবক উন্মাদ

রাঙ্গুনিয়া ভোটার তালিকায় ভুল ।। আবেদনেও মেলেনি সুরাহা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালি এলাকার মিনু দাশ, নুর উদ্দিন ও পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জহির আহমদ বেঁচে থেকেও আজ মৃত! নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভারে মৃতদের তালিকায় রয়েছে তাঁদের নাম। অন্যদিকে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের তন্ময় দাশের ব্যক্তিগত তথ্যে ম্যাডনেস (উন্মাদ) লেখা হয়েছে। একাধিকবার তাঁরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি।
জানা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছিলেন মিনু দাশ, নুর উদ্দিন ও জহির আহমদ। পরবর্তী সময়ে ভোটার হালনাগাদে ভুলবশত মৃত ভোটারদের তালিকায় চলে আসে তাঁদের নাম। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ঘুরেও জীবিত প্রমাণ করতে পারেননি নিজেদের। এরফলে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয় এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে তাঁদের। এমনকি এই একটি ভুলের কারণে এই তিনজন করোনা ভাইরাসের টিকা পর্যন্ত নিতে পারছেন না। মিনু দাশ আক্ষেপ করে জানান, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাঁর নাম মৃতদের তালিকায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করতে পারছেন না। করোনার টিকা নিতে পারছেন না। উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংশোধনের জন্য আবেদন করে এখনো সংশোধন করতে পারেননি। নুর উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংশোধনের জন্য দুইবার আবেদন করেও এখনো পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। আমি সমাজের কাছে জীবিত থেকেও কাগজে-কলমে একজন মৃত মানুষ।’
অন্যদিকে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের কলেজ পড়ুয়া তরুণ তন্ময় দাশ কয়েকমাস আগে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করেন। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ও এনআইডি নম্বর দেয়া হয়। তিনি সেই নাম্বার দিয়ে করোনার টিকা নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা এ্যাপে আবেদন করতে গেলে দেখেন, তার ব্যক্তিগত তথ্যের স্ট্যাটাসে ম্যাডনেস (উন্মাদ) লেখা হয়েছে। বিষয়টি সংশোধনের জন্য রাঙ্গুনিয়া নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা সিভিল সার্জনের কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে আসতে বলেন।
তন্ময় দাশের বাবা তপন দাশ বলেন, তাঁর ছেলে সুস্থ সবল। লেখাপড়াতেও ভালো। তাঁর কোনো মানসিক সমস্যা নেই। নির্বাচন অফিসের ভুলের কারণে এটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এটি তাদের ভুল। অথচ আমার ছেলেকে এখন সুস্থ প্রমাণ করতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।’
উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘তন্ময় দাশের বিষয়টি বেখেয়ালে হয়েছে। সংশোধনের সুযোগ আছে।’
এদিকে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নির্বাচন অফিসের কর্মচারীরা জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন ও সংশোধনসহ নানা কাজ টাকা ছাড়া করেন না। যারা টাকা দেন তাঁদের কাজ আগে করা হয়। অন্যদের ফাইলগুলো ফেলে রাখা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. বায়জিদ আলম বলেন, অফিসের কর্মচারীদের টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। সার্ভারে মৃত তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তা সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। তন্ময় দাশের ডাটা সংশোধনের জন্য সিভিল সার্জনের সনদ প্রয়োজন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরিজ জেতা পিছিয়ে গেল টাইগারদের
পরবর্তী নিবন্ধএকটি মৃত্যুর সংবাদ