আসুন সেলফি আর ভিডিওতে সতর্ক হই

মর্জিনা হক চৌধুরী পপি | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল এই বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার জোয়ারে সেলফি তোলার ধুম লেগে গেছে। ডিজিটাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চলছে সেলফি ক্রেজ। সেলফি, টিকটক, লাইভ ভিডিও এসব নিয়ে মাতামাতি এখন বেড়ে গেছে। কে কার চেয়ে বেশী সেলফি তুলবে, কে কার চেয়ে বেশী লাইক পাবে এটিই যেনো তরুণ প্রজন্মের প্রতিযোগিতা। শুধু বাংলাদেশে নয় হালের জনপ্রিয় ধারা এই সেলফি উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে আছে গোটা বিশ্ব। নানান ঢংয়ে, নানান ভঙিমায় তরুণ তরুণীদের সেলফি, টিকটক ভিডিও করার প্রবণতা এখন বেশী লক্ষ করা যায়। সবাই যেনো সেলফি জ্বরে আক্রান্ত। আজকাল স্মার্টফোনে ‘সেলফি’ তোলা অনেকের নেশা হয়ে গেছে।

রাস্তাঘাটে, বাস-ট্রেনে, স্কুলে-কলেজে বন্ধুদের আড্ডায়, কোথাও ঘুরতে গেলে মজার কিছু খেতে গেলেও সেলফি তুলে ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা আপলোড করা হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট প্রভৃতি। সেলফি তোলার নেশাটা কমবেশি সবারই রয়েছে। লাইক আর কমেন্ট এর পেছনে ছুটতে গিয়ে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেলফি তুলেছেন। শুধু অল্প বয়সীরাই নয়, বয়স্ক মানুষও সেলফি সংস্কৃতির শিকার। তারা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে সেলফি তুলতে গিয়ে নিহত হন। সেলফি, লাইফ ভিডিও বানাতে গিয়ে কোনো কোনো সময় বেদনাদায়ক হতে পারে।

এই তো কিছুদিন আগের কথা সীতাকুণ্ডের কনটেনার ডিপোতে প্রায় শতাধিক লোক মারা গেলো। একটি লাইভ ভিডিওতে দেখতে পেলাম দম কল বাহিনীরা আগুন নেভানো কাজে ব্যস্ত আর ঐ ডিপোর কর্মীরা ব্যস্ত ছিলো লাইভ ভিডিওতে। প্রায় ৪৫ মিনিটের ভিডিও চলাকালীন দেখতে পেলাম হঠাৎ বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠলো, আর ডিপোর ভিতর আটকে থাকা লোকদের আর্তনাদ। পরে দেখতে পেলাম যারা লাইভ ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত ছিলো তারা আর কেউ বেঁচে নেই। কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো পুরু শরীর খুঁজেও পাওয়া যায়নি। অনেকে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কী নির্মম পরিনাম। আজ হয়ত লোক গুলো বেঁচে থাকতো যদি তখন মোবাইলে লাইভ ভিডিওতে ব্যস্ত না থেকে বাইরে বেরিয়ে আসত। সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছে।

এই তো সেদিন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন দুই যুবক বেপরোয়া ভাবে হোন্ডার গতি বাড়িয়ে লাইভ ভিডিও করছিলো মুহুর্তেই দুটি তাজা প্রাণ শেষ হয়ে গেলো। এ রকম হাজারো ঘটনা আছে। বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। কেউ পাহাড় থেকে পড়ে, কেউ নদীতে ডুবে নিহত, এমনকি মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

এমন ভয়ঙ্কর শখের অবশ্যই লাগাম টানা জরুরি। জীবন এক মহামূল্যবান সম্পদ। প্রত্যেকের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে পরিবার ও সমাজ। একজনের মৃত্যুতে পুরো পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। সেলফি, লাইফ ভিডিওর নেশা খুব ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর লাগাম টানতে গণমাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। তাই আসুন নিজেরা সচেতন হই অন্যদেরকেও সচেতন করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহজ্ব বিশ্বভ্রাতৃত্ব বিকাশের অন্যতম মাধ্যম
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ ও মুখোশ