আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেবু্রয়ারি – আমি কি ভুলিতে পারি? সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর অমর সৃষ্টি এ গানটির হৃদয়স্পর্শী সুরারোপ করেন আলতাফ মাহমুদ যার প্রতিটি কথার গাথুঁনি বিঁধে আছে শহীদ মিনার বেদীতে। বিবিসি জরীপে সেরা বাংলা গানের তৃতীয় অবস্থানের এই গানটি বছর ঘুরে একুশ এলেই প্রাণে বাজে, সেই সাথে হৃদয়ে জাগে কত শত কথা, মর্ম ব্যথা, মন মাজারে শোক উচ্চারিত হয় বিমুগ্ধ চেতনায়, কবিতায়, মুক্ত বাতাসের প্রাণ ভরা নি:শ্বাস আর গভীর ভালোবাসায়। শোক জড়ানো ব্যথিত কণ্ঠে সবাই গায় ‘ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি আমরা কি কখনো ভুলিতে পারি? মহান একুশে তাই শত কোটি সালাম জানাই বীর শহীদদের। যাদের মহান আত্নত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেলাম বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। আহা কী সুখ! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে যখন মায়ের ভাষার মিষ্টি মধুর সুর ধ্বনি কানে ভেসে আসে।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস চির জাগ্রত আমাদের মনে, অস্তিত্বে, বাঙালির মনে পড়ে পলাশ শিমুল রাঙা ভোরে মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবীতে শহীদ ভাইদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত পিচঢালা রাজপথের করুণ প্রতিচ্ছবির অবয়ব। সমগ্র পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দেখে ভাষার জন্য নির্মমভাবে আত্নাহুতির শাশ্বত বিপ্লবের রক্তস্নাত ইতিহাস যা হৃদয়ে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। দারুন ক্রোধের আগুনে জ্বলে ওঠা ফেব্রুয়ারি মনের ভাব প্রকাশের অধিকার নিয়েছে কাড়ি তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণার প্রতিবাদের ফসল পেল বাঙালি–ফলে বাংলা ভাষা হল রাষ্ট্র ভাষা, মাতৃভাষার অধিকার পেলাম আমরা। মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা– বাংলা ভাষার এ ঐতিহ্য, এ আভিজাত্য যুগে যুগে স্মরণীয় করেছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে। আমাদের সাহিত্য, সংবাদপত্র, সংস্কৃতিতে তাই রক্তে রাঙ্গানো অমর একুশে ফেবু্রয়ারির অবস্থান চির ভাস্বর। একজন বাঙালি, বাংলাভাষী হিসেবে আমরা গর্বিত জাতি। এ ভাষাকে আরও সমাদৃত করতে হলে বইয়ে, ভাবে, চিন্তা চেতনার অস্তিত্বে বাংলাকে বেশি বেশি করে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু কালি দিয়ে ইংরেজী ভাষার স্থাপনাকে মুছে দিলেই বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রয়োগ যথাযথ হবে না তার জন্য মনে প্রাণে বাংলাকে ভালোবাসে যারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিক হতে হবে। এক হয়ে বাংলা ভাষার সত্যিকার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আগামী প্রজন্মের স্বার্থে। যেমনটি কবি বলেছেন -‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি তারপর ইংরেজী ভাষার পত্তন’ সে সুরেই বলি সালাম রফিক বরকত এর মত শত শহীদের আত্নত্যাগ ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন সফল ও সার্থক হবে তথনই যখন দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হবে।