ভুল বাটনে ভারতীয় বিশেষজ্ঞের চাপ পড়ে যমুনায় সার উৎপাদন বন্ধ

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি

আজাদী অনলাইন | সোমবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২২ অপরাহ্ণ

দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) ভুল বাটনে চাপ পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে কারখানার ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন।

আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় কারখানার ভেতরে ও বাইরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জেএফসিএল সূত্র জানায়, সম্প্রতি যমুনা সার কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেসারে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন অপচয়সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ এনজি বুস্টার ক্রয় ও পুনঃস্থাপনের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘ইনগার্সল-রেন্ড (ইন্ডিয়া) লিমিটেড’কে অবগত করে। পরে ইনগার্সল-রেন্ড কর্তৃপক্ষ কারখানা পরিদর্শনের জন্য তাদের ডেপুটি ম্যানেজার (সার্ভিস) ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ মি. তানাজি এস. পন্দেকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম পাঠায়।

ওই টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন ইনগার্সল-রেন্ড’র টেরিটরি ম্যানেজার (সার্ভিস) মো. ইমামুল সর্দার ও মার্কেটিং প্রতিনিধি কসমো মার্কেটিং কনসালটেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।

কারখানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস. পন্দেকার গতকাল রবিবার বিকেলে কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেসার পরিদর্শন করছিলেন। এ সময় তিনি একটি ভুল বাটনে চাপ দিলে বিকট আওয়াজে প্ল্যান্টটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে মুহূর্তেই ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে।

বিকট আওয়াজে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রথমে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও আজ সোমবার সকাল থেকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়।

কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) মো. আফাজ উদ্দিন বলেন, “আমি, কারখানার মেশিনারিজ প্রধান ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাস ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকার এনজি বুস্টার কমপ্রেসারের বিভিন্ন প্যারামিটার ঘুরে দেখছিলাম। এ সময় এমটিএস বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী ওভারটাইম সংশ্লিষ্ট কিছু জটিলতা নিয়ে আমার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে আমি আলাদাভাবে কথা বলায় আমার অনুপস্থিতিতে ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাস অ্যামোনিয়া শিফট ইনচার্জ ফজলুল হককে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে থাকার জন্য বলেন। পরিদর্শন চলাকালে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎ অ্যামোনিয়া কমপ্রেসার বন্ধ হয়ে যায়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।”

এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় পরিদর্শকের সঙ্গে থাকা মো. আফাজ উদ্দিনকে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাসকে সদস্য করা হয়েছে। এতে বিষয়টি পরিকল্পিত নাকি অনাকাঙ্ক্ষিত তা নিয়ে খোদ কারখানার ভেতরেই নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ জুন থেকে গ্যাস সংকটের জন্য টানা ছয় মাস কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। ২০ ডিসেম্বর সার উৎপাদন চালু হলেও নতুন করে বন্ধ হওয়ায় নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে কবে নাগাদ ফের উৎপাদন শুরু হবে তা নিশ্চিত বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় ডলুনদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনঃ লাখ টাকা জরিমানা