টেলিগ্রাম কেন এত জনপ্রিয়?

সাফ্ফাত আহম্মদ খান | শুক্রবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ

স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত নেই এমন ব্যক্তি মনে হয় টর্চ জ্বালিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। প্রতিনিয়তই ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, উই চ্যাট ইত্যাদির মতো অ্যাপ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। তবে এগুলোকে ছাড়িয়ে বর্তমানে তরুণ প্রজম্মের কাছে টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে শীর্ষে। এর মূল কারণ হলো ডাটা এনক্রিপশন, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা।

২০১৩ সালে রুশ টেক ডেভেলপার পাভেল দুরভ-এর হাত ধরে টেলিগ্রাম-এর যাত্রা শুরু। তার সাথে সহযোগী ছিলেন ভাই নিকোলাই দুরভ। পাভেল এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা পাবে। এর আগে পাভেল ফেসবুকের মতো ভিকে নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট তৈরি করেছিলেন যা রাশিয়াতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল কিন্তু নিজের স্বাধীন মতার্দশের কারণে তিনি রুশ সরকারের রোষানলে পড়ে যান কারণ তিনি রুশ সরকারকে ব্যবহারকারীদের কোনো ডাটা দিয়ে সাহায্য করেননি। ফলে চাপের মুখে তাকে ঐ কোম্পানি থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়। টেলিগ্রামের ক্ষেত্রেও পাভেলকে একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

২০১৮ সালে রাশিয়াতে টেলিগ্রাম ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করা হয় এবং ২০২০ সালে তা নিষিদ্ধ করা হয়। এত সব চাপের মুখে পাভেল দেশান্তরী হতে বাধ্য হন। পাভেল দুর্বে তার টেলিগ্রাম-এর ডাটা শেয়ার করার ব্যাপারে কঠিন নীতিতে বিশ^াসী ছিলেন। তার ভাষ্যমতে এ পর্যন্ত তিনি টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীর ০ বাইট ডাটা শেয়ার করেছেন।

বর্তমানে টেলিগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি এবং জেনে অবাক হবেন যে এর কর্মী বাহিনী মাত্র ৩০ জন। টেলিগ্রাম অ্যাপ জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে এর বিশেষ ফিচার। যেখানে অন্যান্য অ্যাপে ফাইল শেয়ারিং সাইজ ৫০-১০০ এমবি সেখানে টেলিগ্রামে সবোর্চ্চ ২ জিবি পর্যন্ত একটি একক ফাইল শেয়ার করা যায়। একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে ২ লক্ষ পর্যন্ত সদস্য যুক্ত থাকতে পারে। এটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে হওয়ার কারণে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মোবাইলে আলাদা জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। এর এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনের সিকিউরিটি ফিচারে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পাভেল টেলিগ্রাম সিকিউরিটি নিরাপত্তা দুর্বলতা পরীক্ষা করতে ৩ লক্ষ ডলারের বাগ বাউন্টি ঘোষণা করেছিলেন যা আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। এতেই বুঝা যায় টেলিগ্রাম-এর নিরাপত্তা কতটা শক্তিশালী।

তবে সবচেয়ে বেশি যে ফিচারটি অন্যদের চেয়ে আলাদা সেটি হচ্ছে টেলিগ্রাম বট। বট বলতে এখানে রোবট বা অটোমেটিক বুঝানো হয়েছে। ফেসবুক মেসেঞ্জার বা অনান্য অ্যাপে শুধু চ্যাটবট আছে যা কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর দিয়ে থাকে কিন্তু টেলিগ্রাম-এর বট ফিচার সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।

যেমনঃ ধরুন আপনার একটি ডকুমেন্ট ফাইলকে পিডিএফ ফরম্যাটে কনভার্ট করার প্রয়োজন। আপনি টেলিগ্রাম বট লিংকে গিয়ে তাকে ফাইল দিলেই সে মুহূর্তের মধ্যে তা কনভার্ট করে দিবে, আপনার আলাদা কোনো সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে না।
এরকম নানান কাজের হাজার হাজার বট আছে যা আপনার কাজকে সহজ ও দ্রুত করে দিবে। টেলিগ্রাম-এর এপিআই ব্যবহার করে এ ধরনের বট তৈরি করা হয়ে থাকে। এপিআই টোকেন ও প্রোগ্রামিং করে চাহিদা অনুযায়ী কাজের বট বানানো যায়। আজকাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এই ধরনের বট প্রোগ্রামারদের কাজের চাহিদা বেশি। গুগলে সার্চ করলেই আপনি অনেক রকম টেলিগ্রাম বট চ্যানেলের লিংক পেয়ে যাবেন। তবে নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য টেলিগ্রাম চ্যানেল লিংক খুঁজতে চাইলে https://lyzem.com/ এই সাইটে গিয়ে সার্চ করতে পারেন।

টেক দুনিয়ায় টেলিগ্রামকে রিসোর্সের সাগরের সাথে তুলনা করা যায়। সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এর থেকে অনেক লাভবান হওয়া যেতে পারে।

লেখক: কম্পিউটার হ্যাকিং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর

পূর্ববর্তী নিবন্ধদোহাজারী পৌরবাসী পেয়েছে সৎ ও নিষ্ঠাবান পৌরপিতা
পরবর্তী নিবন্ধকর্মকর্তাদের ভেতরে রেখে চবি আলাওল হলের অফিসে তালা দিল শিক্ষার্থীরা