ভোজ্যতেলের আমাদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বোতলজাত তেলের দাম ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮৭ টাকা।
সেই হিসাবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল ১২ টাকা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ মে) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে জানানো হয়, ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসেসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী- খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৭৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৯৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৬০ টাকা, পাম সুপার খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬৭ টাকা। আর পাঁচ লিটার ২১ টাকা কমিয়ে ৯০৬ টাকা এবং পাম ওয়েলের দাম ছিল ১১৭ টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ভোজ্যতেলের এ দাম নির্ধারণ করা হয়।
সেই হিসেবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা, খোলা তেলের দাম ৯ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫৪ টাকা এবং পামওয়েলে ১৮ টাকা বেড়েছে।
এর আগে ১৭ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম অনুযায়ী, ১২ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯২৫ টাকা, খোলা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭২ টাকা এবং প্রতি লিটার পাম ওয়েলের দাম ১২১ টাকা করা হয়।
এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “ভোজ্যতেলের আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। অবিলম্বে এ মূল্য কার্যকর হবে।”
এর আগে গত রবিবার (৩০ এপ্রিল) বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বুধবার থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
এদিকে, গত বছরের মার্চ মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ের জন্য কম মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছিল। রবিবার (৩০ এপ্রিল) তার সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন বেশি ভ্যাট দিয়ে পণ্য খালাস করতে হবে, বাজারেও ছাড়তে হবে বলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর পক্ষে।
আগের হারে এখন ভ্যাট আদায় হবে বলে এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ২০৫ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১ হাজার ৫ টাকা, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮৪ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১২৯ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে বলে সমিতিটি দাবি করছে।
সমিতিটি বলেছে, গত বছরের ১৬ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, তার মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। ১ মে থেকে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়েও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ করতে হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রজ্ঞাপনটির মেয়াদ বাড়াতে চলতি মাসের শুরুর দিকেই আমরা এনবিআরকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু এনবিআর থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। প্রজ্ঞাপনটি আজ ওঠে গেলেও ভোজ্যতেলের দামের ওপর প্রভাব এখনই পড়ার কথা নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা ৩ লাখ টনের কাছাকাছি। স্থানীয় উৎপাদন হয় দুই লাখ টন, আর বাকি ১৮ লাখ টনই আমদানি করতে হয়।