অস্ট্রেলিয়ার বদলে যেতে হলো জেলে

অপরাধে জড়িয়ে একাধিক মামলার আসামি

| বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৬ অপরাহ্ণ

মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনু(২৯) উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি।

নানা অপরাধে জড়িয়ে হয়েছেন একাধিক মামলার আসামি। স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

পরিবারের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে তাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়া হলেও দুই বছরের মাথায় অপরাধে জড়ানোর কারণে তার ভিসা বাতিল করে দেশটি।

পরিবারের সম্মতি ছাড়া করেছেন বিয়ে। তবে তার বউকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছিল পরিবার। এরপর মাঈনুকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো কিন্তু সম্পত্তি ভাগাভাগির জেরে নিজের মা জেসমিন আক্তারকে হত্যা করে কারাগারে যেতে হচ্ছে তাকে।

আজ বৃহস্পতিবার(১৮ আগস্ট) র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ।

গ্রেফতার মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনু পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে। গত ১৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন শামসুল আলম। আর গত ১৬ আগস্ট দুপুরে মাকে গুলি করে হত্যা করেন মাঈনু।

ওইদিন মাঈনুকে একমাত্র আসামি করে বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদি হয়ে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, “শামসুল আলম মাস্টার জীবিত থাকাবস্থায়ই মাঈনুদ্দীন উশৃঙ্খল ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য ছেলের ওপর তিনিও বিরক্ত ছিলেন। উশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে অপরাধে জড়িয়ে দুই বছর পর দেশে চলে এসেছেন। দেশে আসার পর আবারও বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করেন। তার পরিবারের প্রভাব ব্যবহার করেও তিনি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। বাবা তাকে কোনো সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাননি বলে তিনি পরিবারের প্রতি নাখোশ ছিলেন।”

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক আরও বলেন, “গ্রেফতারের পর মাঈনুদ্দীনের মধ্যে মাকে খুন করার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা দেখিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। সেটি বৈধ নাকি অবৈধ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ১৩ জুলাই শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটি জেনে মাঈনুদ্দীনের ধারণা হয়েছিল তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাবেন। এ নিয়ে দুপুরে ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাধান মাঈনুদ্দীন। এক পর্যায়ে নিজের কোমরে থাকা পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলি ছোড়েন। সেটি লক্ষভ্রষ্ট হলে আরেকটি গুলি ছোড়েন মায়ের দিকে।”

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, “মাকে গুলি করে দ্রুত চন্দনাইশের দোহাজারীতে চলে যান মাঈনু। সেখান থেকে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সাতকানিয়ায় গিয়ে একটি কারখানায় আশ্রয় নেন। গ্রেফতার এড়াতে মোবাইল ফোন সেট ফেলে দেন। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বুধবার সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে তিনি ঢাকাগামী বাসে উঠেন। ওই বাস শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।”

এমএ ইউসুফ বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পারিবারিক অবক্ষয় থেকে। পরিবার থেকে যদি মাঈনুকে ছোটবেলা থেকে নজরদারিতে রাখা হতো, শাসনের মধ্যে রাখা হতো তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না। তাকে দেখেই মনে হয় নেশাগ্রস্ত। আজকের মাঈনু একদিনে তৈরি হয়নি।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে আগুনে পুড়ল তিন বসতঘর
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে হত্যা মামলার আসামি আটক