পরিবারই শ্রেষ্ঠ শিক্ষালয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরের অভিজ্ঞতা

ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন | সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে অনিয়মিতভাবে এবং এই বছরের শুরু হতে প্রায় নিয়মিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস চলছে। এই সময়ে আমার অভিজ্ঞতা কী তা নিজের মধ্যে বিশ্লেষণ করে কয়েকটি উত্তর খুঁজে পেলাম।
ক. অনেক সময় দেখি যে অনেকের আচরণগত সমস্যা হচ্ছে
খ. অনেকে প্রচণ্ড জেদ করছে
গ. ইমোশনাল রিঅ্যাকশন হচ্ছে
ঘ. কান্নাকাটি করছে কেউ কেউ
ঙ. কেউ হয়তো জেদ করে কোনো কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে
চ. ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়েছে
ছ. অনেকেই সঠিক ব্যবহার কীভাবে করতে হয় ভুলে গেছে
জ. ছাত্র-ছাত্রীরা বিষণ্নতা, উদ্বেগ আর মানসিক চাপে ভুগছে
ঝ. একটু বড়রা পরিবারের অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি করছে, আইসোলেটেড হয়ে আছে, তারা তাদের রুমেই বেশি সময় কাটাচ্ছে।

এই সমস্যা গুলো কাদের মধ্যে হচ্ছে? বেশি বেশি হচ্ছে ছেলেদের এবং বয়সে কিছুটা বড় বা কিশোরদের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন হচ্ছে। আচরণের এই প্রভাব করোনার পরে ও আগের ছাত্রদের ওপর করা আমার পর্যবেক্ষণ।
শিশুর বিকাশের জন্য কোনো পরিবারই আদর্শ নয়। প্রায় সকল পরিবারে কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতা, যেমন-কলহ, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, অপর্যাপ্ত আবাসস্থল, বিদ্যমান থাকে। তার ওপর পূর্ণ মাত্রায় শিশুর পড়ালেখার দায়িত্ব পরিবারের ঘাড়ে পড়ায় অনেক বাবা-মাকেও অতিরিক্ত মানসিক চাপে পড়তে হচ্ছে। এই অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তা এবং আচরণে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে শিশুর মধ্যে অতিমাত্রায় রাগ, জেদ এবং হিংসাত্মক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

শিশুদের মতে, বাসায় থাকতে আর ভালো লাগছে না, বোরিং হয়ে গেছি। দীর্ঘদিন ঘরবন্দী অবস্থা শিশুদের মানসিক বিকাশে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের আচরণগত পরিবর্তন শিশুদেরকে মহামারি পরবর্তী জীবনেও খাপ-খাইয়ে নিতে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও সেখানে অন্য শিশুদের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং শ্রেণীকক্ষে মনোযোগ বজায় রাখা কষ্টকর হচ্ছে অধিকাংশ শিশুর জন্য যা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম।

“বহুদিন ধরে বাচ্চারা যদি একটা রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তারপর যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়, সেখানে কিন্তু তাকে খাপ-খাওয়াতে বেগ পেতে হয়, এটাই স্বাভাবিক।” এই কথাগুলো করোনায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের পরই উপলব্ধি করেছিলাম।

প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষার্থী এবং পরিবারের নিবিড় যোগাযোগ থাকলে ছাত্র-ছাত্রী এবং পিতা-মাতা উভয়েরই মানসিক দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনা যায়।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসিক এবং সামাজিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।

একদিকে তাদেরকে যেমন পাশে থাকতে হবে, অন্যদিকে শিশুরা যাতে পরিবারে থেকেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে কিন্তু কতজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক এই কাজটি করছেন বা সম্ভব হচ্ছে? শিশুরা হতাশ হয়ে গেলে বাবা-মাকে তার পাশে থাকতে হবে। পরিবারের বিকল্প কিন্তু কিছু নেই। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের উপরই এসে পড়বে।

“বাচ্চাদের পাশে, কিশোর-কিশোরীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বোঝানো, তাদের সময় দেয়া-পরিবারকেই করতে হবে।”

এইসব ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীর শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে পরিবার। রাষ্ট্র মাথা ঘামায়নি। করোনার পরে কীভাবে শ্রেণিকক্ষে আসবে, তাদের সাথে কেমন আচরণ হবে, পড়ালেখায় কীভাবে মনোযোগ দেয়া যায়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া। ক্লাস রুমগুলোর অবস্থা। এইসব কোনোটিই আমরা রাষ্ট্র থেকে ব্যবস্থার উদ্যোগ দেখিনি। ঠিক আগের মতো তারা পাবলিক পরীক্ষা, নানা কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়েই দায় শেষ করছে। তাই পরিবার, অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তাদের জন্য শেষ ভরসার জায়গা।

সেক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে, ধর্মীয় প্রার্থনা, খাবার ও ঘুমানোর সময়, বাবা-মায়ের সাথে বিভিন্ন কাজে অংশ নেয়া এবং পড়াশোনার জন্যও একটা সময় বেঁধে দিতে হবে। অন্যথায় অনেকের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অসুবিধার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি।

আসুন সন্তানের জন্য পরিবারকেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষালয় হিসাবে গড়ে তুলি।
লেখক: শিক্ষাবিদ
www.facebook.com/krmsc

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী আর নেই
পরবর্তী নিবন্ধছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রামের দুজন