কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় নিহত ৬ ভাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে এবার দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের আবেদন ও সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে এককালীন ৩৫ লক্ষ টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
ছয় ভাইয়ের স্ত্রীদের প্রত্যেকের নামে ৫ লক্ষ টাকা করে এবং আহত বোন হীরা, ভাই প্লাবন ও বৃদ্ধা মা মৃণালিনী শীলের জন্য যৌথভাবে আরো ৫ লক্ষসহ সর্বমোট ৩৫ লক্ষ টাকার অনুদানের চেক আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ জাফর আলম বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই পরিবারগুলো এই অর্থ সহায়তা পেয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একসঙ্গে হারিয়েছেন বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সকল সদস্যকে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এককালীন অনুদান প্রদান ছাড়াও সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি বাড়িও নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে পরিবারগুলো স্থায়ী ঠিকানায় পরবর্তী জীবন কাটাতে পারে।”
এজন্য চকরিয়াবাসীর পক্ষ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ইতোপূর্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন দফায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকাসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও দেওয়া হয়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একসঙ্গে দেওয়া হলো ৩৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তাদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এসব বাড়ির প্রত্যেকটিতে খরচ হচ্ছে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা করে। যত দ্রুত সম্ভব এসব পরিবারকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের পারলৌকিক ক্রিয়ানুষ্ঠানের (শ্রাদ্ধ) আচার সেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাড়ি ফেরার জন্য সড়কের পাশে অপেক্ষারত ৯ ভাই-বোনের মধ্যে একসঙ্গে ৬ ভাই ও এক বোনকে চাপা দেয় দ্রুতগামী একটি পিকআপ। এতে ঘটনাস্থলে চার ভাই, একইদিন চমেক হাসপাতালে আরেক ভাই এবং ১৪ দিন ধরে অচেতন থাকাবস্থায় সর্বশেষ আরো এক ভাইসহ একে একে ৬ ভাই যথাক্রমে অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল, স্মরণ শীল ও রক্তিম শীল প্রাণ হারান মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায়।
এছাড়া তাদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হলে দৃষ্টিগোচর হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী জানান, চেক হস্তান্তর উপলক্ষে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়ির উঠানে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম।
আরো বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান, চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা লায়ন কমরুদ্দীন আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, জাহেদুল ইসলাম লিটু, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আজিজুল মন্নান, শাহনেওয়াজ তালুকদার প্রমুখ।