খাগড়াছড়িতে ফুল ভাসিয়ে শুরু বিজু

বৈসাবি উপলক্ষ্যে বর্ণিল শোভাযাত্রা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১২ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৩৮ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকায় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে নদীতে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু’র আনুষ্ঠানিকতা।

আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদী সংলগ্ন বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির প্রধান উদ্যোগে এ ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ভোর ৬টায় ফুল ভাসানো শুরু হয়। রীতি অনুযায়ী পুরানো বছরের দুঃখ-জরা ভুলে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় নদীর জলে দেবী গঙ্গার উদ্দেশে এই ফুল ভাসানো হয়।

চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে এই ফুল ভাসানো শুরু হয়। সকালে চাকমা তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা, রজ্ঞনসহ নানা রকমের ফুল নদীর জলে ভাসায়। পরে নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে করজোড়ে প্রার্থনা করে।

নদীতে ফুল ভাসাতে আসা তরুণী মেপি চাকমা, রূপা চাকমা, পায়েল ত্রিপুরা জানান, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে ফুল বিজু। পুরানো বছরের দুঃখ, গ্লানি দূর করতে ফুল ভাসানো হয়। নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু ফুল ছাড়াও মাধবীলতা, অলকানন্দা, নিম পাতা, রঙ্গন, জবাফুলসহ বাহারি ফুল কলাপাতায় করে নদীর জলে ভাসানো হয়। ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে চাকমা তরুণ-তরুণীরা ফুল বিজুতে অংশ নেয়। বিজুতে দেশবাসীর জন্য মঙ্গল কামনা করে পুণ্যার্থীরা।

বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির প্রধান ধীমান খীসা বলেন, “ফুল বিজুর মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়েছে। আগামী বছর যাতে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে সেই প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর নদীর বেদিতে ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে পূজা করি।”

ফুল ভাসানো বা ফুল বিজু চাকমাদের উৎসব হলেও সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধনে এই উৎসব সার্বজনীন রূপ নেয়।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণে উদযাপন করা হয় বৈসাবি উৎসব। আজ মঙ্গলবার সকালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈসাবি উপলক্ষ্যে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাক্সফোর্স চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জেলার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব পোশাক পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।

শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের টাউন হল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ত্রিপুরাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় র‌্যালিতে। আয়োজন করা হয়েছে এতিহ্যবাহী ডিসপ্লে।

এসময় বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।

এ সময় সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় গাড়িচাপায় নিহত সেই ৬ ভাইয়ের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান
পরবর্তী নিবন্ধদুদকের মামলায় দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে