উৎসবের রঙে বর্ণিল পাহাড়

রাঙামাটি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১২ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩৪ অপরাহ্ণ

উৎসবের নানা রঙে পাহাড়ে চলছে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু,বিহু’র বর্ণিল আয়োজন। পাহাড়ের বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে এখন মুখর পার্বত্য জনপদ।

আজ শুরু হয়েছে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি’র ধর্মীয় আচার। পাহাড় জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। নানান আয়োজনে মুখর পাহাড়ি শহর গ্রাম।

পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানালেন পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা। ফুল ভাসাতে আসা তরুণ-তরুণীরা বলেন, বিগত দু’টি বছর করোনার কারণে বৈসাবি উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার মহাধুমধাম করে পালন করব।

আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজানোর কাজ করেছে রাঙামাটির চাকমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ। ঘর সাজানো শেষে পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ-বেদনাই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বাললেন পাহাড়ের মানুষ।

আজ সকালে রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসাতে আসা চাকমা তরুণী নবনীতা বলেন, “বিজু মানে আনন্দ বিজু মানে ভালোবাসা, আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা। আজকে হচ্ছে ফুল বিজু, ফুল বিজু হচ্ছে পবিত্র একটি দিন। পবিত্র দিনের সাথে সাথে মানুষের হ্রদয়ও যাতে পবিত্র হয় ভগবানের কাছে এ প্রার্থনা করেছি।”

এদিকে, রাজবন বিহার ঘাটে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যেগে পানিতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “গত দু’টি বছর করোনা মহামারীর কারণে পাহাড়ে কোনো উৎসব হয়নি।”

তিনি বলেন, “মানুষের এত উচ্ছাস, এত রং দেখে আমাদের অন্তর ছুঁয়ে গেছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সকলেই আমরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। সকলের মঙ্গল হোক, এই উৎসব আমাদের সবাইকে এক করেছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য এবং বৈচিত্রকে আমরা ধারণ এবং চর্চা করব।”

শহরের ত্রিপুরা পল্লী হিসেবে খ্যাত গর্জনতলীতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীও কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসুক উৎসবের শুভ সূচনা করে। পানিতে ফুল ভাসাতে গিয়ে শিয়াই ত্রিপুরা বলেন, “চৈত্র সংক্রান্তিকে বিদায় দিয়ে গঙ্গা মাকে পুজা করি এবং নতুন বছর যাতে আমাদের ভালো কাটে সেই প্রার্থনাই করলাম।”

ডোজী ত্রিপুরা বলেন, “হারি বৈসুকের দিনে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যাতে পুরনো যত দুঃখ, গ্লানি রয়েছে সবকিছু ধুয়ে মুছে চলে যায় এই পৃথিবী থেকে।”

আরেক তরুণী খইমই ত্রিপুরা বলেন, “আজকের দিনে গঙ্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা ছিল বাংলাদেশের এই সময়ে যত সাম্প্রদায়িক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এগুলো যাতে আর না হয়।”

শুধুই পানিতে ফুলে ভাসানো। পুরো পাহাড়েই এখন নানান বর্ণাঢ্য আয়োজন। অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক আয়োজন আর খেলাখুলা। ঐতিহ্যবাহী বলিখেলায় উপস্থিত ছিলেন হাজারো মানুষ।

আগামীকাল বুধবার উৎসবের প্রধান দিন যা মূল বিজু নামে পরিচিত। সেদিন দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি বেড়াবে ছেলেবুড়ো সবাই। পাঁচন আর দোচোয়ানির স্বাদে মুগ্ধ পাহাড়ে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে সব সীমারেখা ছাড়িয়ে। আর বেজে উঠবে পাহাড়ি গানের সুর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় ভাই-ভাবির হাতে ছোট ভাই খুন
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় গাড়িচাপায় নিহত সেই ৬ ভাইয়ের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান