আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, আপনি দেশের মালিক। এদেশ আগামী পাঁচ বছর আপনার পক্ষে কে চালাবে সেটা আপনি ঠিক করুন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিন। চিন্তা–ভাবনা করে ভোট দিন।
গতকাল সোমবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘ভোটের গাড়ি’ শীর্ষক প্রচারণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০২৬ সালের গণভোট সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবর বাসসের। নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশেষভাবে তরুণ সমাজ, নারী ভোটার ও প্রথমবারের মতো হওয়া ভোটারদের এগিয়ে আসতে বলেন। তিনি বলেন, আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তরুণ সমাজ, নারী ভোটার এবং প্রথমবারের ভোটারদের প্রতি। আপনারা এগিয়ে আসুন। প্রশ্ন করুন, জানুন, বুঝুন এবং ভোট দিন। আপনার সিদ্ধান্তে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ।
ভয়হীন ও মুক্ত পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে থাকবে না ভয়, থাকবে না বাধা। থাকবে কেবল জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মত প্রকাশ। সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটাধিকার কারো দয়া নয়, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি আমাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। চলুন, ভোট দিই নিজের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, নতুন পৃথিবীর জন্য।
‘ভোটের গাড়ি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়ি নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দবাণী বহনকারী বহর। এটি জানিয়ে দেবে আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। জনগণ এই সনদে সমর্থন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সনদের পক্ষে থাকলে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। গণতান্ত্রিক এই যাত্রাকে সফল করতে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
‘ভোটের গাড়ি’ উদ্বোধন : ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে গণভোটকে সামনে রেখে প্রচারণার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নকশাকৃত ‘সুপার ক্যারাভ্যান’ নামে ১০টি ‘ভোটের গাড়ি’ গতকাল দেশব্যাপী যাত্রা শুরু করেছে। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সুপার ক্যারাভ্যান’ উদ্বোধন করা হয়।
ফিতা কেটে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এই প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য হলো, ‘দেশের চাবি আপনার হাতে’।
সচেতনতা বাড়াতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সাতটি সংক্ষিপ্ত টিভিসি তৈরি করেছে, যেখানে ফেলানী হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক প্রতিবেশী প্রভাব ও নির্ভরশীলতা ইত্যাদি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এসব টিভিসি দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হবে, যাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি পায়। কর্মকর্তারা জানান, সরকার আরো ৩০টি টিভিসি তৈরির পরিকল্পনা করেছে।












