পৃথিবীতে এলো সন্তান, সাড়ে তিন ঘণ্টা পর চলে গেলেন পিতা

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

সন্তানের প্রথম কান্না যখন শুনতে পেল পৃথিবী, তখনই আরেক প্রান্তে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছিল একজন পিতার জীবনপ্রদীপ। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে জীবন আর মৃত্যুর এই অদ্ভুত লেনদেন যেন নীরব আঘাত হানে পুরো পরিবারে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে এক বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম হয়। আর একইদিন রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পিতা মামুনুর রশিদ (২৮)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়াল পাড়ার আবদুল গফুরের পুত্র ও কক্সবাজারের টেকনাফের ব্যবসায়ী।

জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর নিজ এলাকা থেকে বাইকযোগে টেকনাফে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন মামুন। সন্ধ্যায় কক্সবাজারটেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শীলখালী এলাকায় পৌঁছলে একইমুখী দাঁড়িয়ে থাকা একটি খড়বোঝাই মিনিট্রাকের পেছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রেরণ করা হয়। সেখানে একটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে গতকাল বুধবার সকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত মামুনুর রশীদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় স্বজনরা বলেন, নবজাতক শিশুটিকে দেখার সুযোগটুকুও পেলেন না মামুন। বাক্যটি উচ্চারণ করতে গিয়েই অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। যেন শব্দগুলোও ব্যথায় ভারী হয়ে উঠছে। সময়ের এমন নিষ্ঠুরতা, যেখানে অপেক্ষার দরজা খুলে যাওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেল এক জীবনের পথচলা। কি অমোঘ এই বিদায়, কি অসম এই বিচ্ছেদ। নবজাতকের পাশে দাঁড়িয়ে এখন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এক পরিবার। জন্মের প্রথম দিনেই বাবা হারানো শিশুটিকে দেখে সকলে একটাই কথা বলছেন, আল্লাহ যেন তার পথটা সহজ করে দেন।

নিহতের চাচা মাওলানা আবদুস ছবুর জানান, শিশুটি এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রথম দিনই বাবা চলে গেলেন। এমন দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নবজাতকের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বুধবার দুপুরে আওয়াল পাড়া ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত মামুনুর রশীদকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু, কেউ বলছেন আত্মহত্যা কারো মতে রহস্যজনক
পরবর্তী নিবন্ধদেশের বিভিন্ন অঞ্চল হানাদারমুক্ত হতে থাকে