হাসিনার ৫, রেহানার ৭ ও টিউলিপের ২ বছর কারাদণ্ড

প্লট দুর্নীতি

| মঙ্গলবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির আরেক মামলার রায় দিয়েছে আদালত। শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার তার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককেও দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে। যার নামে প্লট, সেই শেখ রেহানাকে দেওয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। তার বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম গতকাল সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার অভিযোগ ছিল, ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে আইন ভেঙে দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ রেহানা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোনকে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেন। ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার মা রেহানাকে প্লট পাইয়ে দিতে খালা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন। খবর বিডিনিউজের।

দুদকের দায়ের করা এ মামলার ১৭ আসামির মধ্যে বাকি ১৪ জনের প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। আসামিদের সবাইকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে। সেই সঙ্গে শেখ রেহানার নামে পূর্বাচলের প্লটের বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির অন্য তিন মামলায় গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় অন্য একটি আদালত। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড। তার আগে গত ১৭ নভেম্বর জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির আরো দুটো মামলা আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ওই দুই মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপের সঙ্গে টিউলিপের ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও আসামি।

গতকাল যে মামলার রায় হলো, তার ১৭ আসামির মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে রয়েছেন। রায়ের সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ বাকিদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে। ফলে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী মামলা লড়ার সুযোগ পাননি।

আদালতকে সম্মান দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করায় খুরশীদ আলমকে এর আগের তিন মামলায় লঘু শাস্তি হিসেবে এক বছর করে মোট তিন বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গতকালের রায়ে তাকে কৃপা দেখাননি বিচারক। সে প্রসঙ্গ ধরে খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর রহমান রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গত বৃহস্পতিবার তিনটি মামলায় রায় হয়েছে। সেখানে খুরশীদ আলমের এক বছর করে সাজা হয়েছে। এই মামলার নেচারও প্রায় একই রকম ছিল। আশা করেছিলাম, সাজা হলেও আগের ন্যায় হবে। হয়েছে পাঁচ বছর। রায়ে অসন্তুষ্ট। সাজার বিরুদ্ধে আপিল করব।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খান মো. মাইনুল হাসান লিপনও রায়ে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটা হয়নি। কমিশনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

বিগত সরকারের আমলে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ রেহানার প্লট নম্বর ১৩, ববির প্লট নম্বর ১১ ও রূপন্তীর প্লট নম্বর ১৯। আর শেখ হাসিনার প্লট নম্বর ৯, জয়ের ১৫ নম্বর এবং পুতুলের প্লট নম্বর ১৭।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিনই ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও আছেন দেশের বাইরে। ওই সময় থেকেই একের পর এক মামলা হতে থাকে থানা ও আদালতে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচলের প্লটগুলো বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হাসিনা ও রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তার আগে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট। ওই কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।

অনুসন্ধান শেষে ছয়টি প্লটের জন্য মোট ছয়টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে শেখ রেহানার প্লটের মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন। ১৩ জানুয়ারি দায়ের করা ওই মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরও দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। এরপর ১৩ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

হাসিনা রেহানা টিউলিপ কেন আইনজীবী পাননি, ব্যাখ্যা দিলেন বিচারক : প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক কেন আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পাননি, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারক। ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম গতকাল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় পৃথিবীর যেখানে অবস্থান করুক না কেন সেই আসামিকে বিচার করতে আইনে কোনো বাধা নেই। কেবলমাত্র মৃত্যুদণ্ডের ধারার মামলার ক্ষেত্রে পলাতক আসামির ক্ষেত্রে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্রনিযুক্ত) ল ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য ধারা না থাকলে মামলায় পলাতক আসামির ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারার অভিযোগ না থাকায় আসামিদের জন্য ডিফেন্স ল ইয়ার নিয়োগ প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।

এ মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের পক্ষে আইনি লড়াই করতে আবেদন করেছিলেন মোরশেদ হোসেন শাহীন নামে এক আইনজীবী। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ তখন দেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৮ সৈনিকের দেহাবশেষ নিয়ে গেল জাপান
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-ঢাকা রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মুক্তিবাহিনী