ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফর ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছে : যৌথ বিবৃতি

| সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে’র বাংলাদেশ সফর দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরভাবে বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করছেন। শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা স্বাগত জানান। এছাড়া গার্ড অব অনার এবং তোপধ্বনি দেওয়া হয়। পরে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। খবর বাসসের।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পৃথকভাবে সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গতকাল দুই নেতার উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করেন, বিশেষ গুরুত্ব দেন বাণিজ্য, সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে।

প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভুটানই প্রথম দেশ যারা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভুটানের অকৃত্রিম সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় পক্ষ ২০২৪ সালের মার্চে ভুটানের রাজার সফরের কথাও উল্লেখ করেন, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করেছিল। বাংলাদেশ ও ভুটান বাণিজ্য ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। ঢাকা ভুটানের রাজার গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি উদ্যোগের প্রশংসা করে এবং সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে। উভয় পক্ষ কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ইতিবাচক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে।

বাংলাদেশ সরকারটুসরকার ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়, যা ভুটানের জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করবে। দুই দেশের নেতা ট্রাফিকইনট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

গত বছর ভুটানের রাজার সফরের পর সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে দেশটির শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএস/বিডিএস আসনের বার্ষিক বরাদ্দ ৩০ জনে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ বুয়েটে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ১০টি নির্দিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং আসন, ক্রীড়া বিজ্ঞানে ডিপ্লোমার জন্য বিকেএসপিতে একটি নির্দিষ্ট আসন, ভুটানি ক্রীড়া দলের জন্য হোমগ্রাউন্ড সুবিধা এবং ভুটানি বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশেষায়িত পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে।

উভয় নেতা সার্ক এবং বিমসটেকসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং উপআঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যা অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সাধারণ আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

প্রধানমন্ত্রী তোবগে তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানান। তার সঙ্গে রয়েছেন ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি এন ধুঙ্গিয়েল, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়নপো নামগিয়াল দরজি এবং ভুটানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপির ৫ সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধ৭ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি অনিয়ম তদন্তে নামল দুদক