পলিথিন ও প্লাস্টিক থেকে উৎপাদন হচ্ছে ফার্নিচার

কক্সবাজারে কারখানা উদ্বোধন

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে চালু হলো একটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা, যেখানে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে টেকসই ফার্নিচারসহ মূল্যবান পণ্য। পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন বাজার। এটি এই সেক্টরে কক্সবাজারে তৈরিকৃত প্রথম কারখানা। কারখানাটি এরই মধ্যে সর্বমহলে সাড়া ফেলেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পলিথিনপ্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের এ উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একটি মাইলফলক।

গত বৃহস্পতিবার প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাটি উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, এই উদ্যোগ টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি অনন্য উদাহরণ। এটি একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে নারী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। অদূর ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটক ও বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে কক্সবাজারে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এক সমীক্ষার তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরে দিনে প্রায় সাড়ে ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হয়। এর মধ্যে একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বা পলিথিন, পণ্যের মোড়ক, পলিপ্রোপিলিন এবং পাতলা পলিথিন ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলো পুনঃপ্রক্রিয়া করা খুবই কঠিন এবং এর কোনো বাজার মূল্য নেই। কক্সবাজারের এই রিসাইক্লিং কারখানায় এমন বর্জ্য থেকেই তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন সোফা, বেঞ্চসহ মজবুত খুঁটি।

ইউনাইটেড নেশনস অফিস অর প্রজেক্ট সার্ভিসেজের বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর মেইসন সালাম বলেন, এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত, যেখানে সরকারিবেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে এবং নারীদের ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাংকইউএনওপিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ) প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘদিন ধরেই ব্র্যাক কক্সবাজারকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এই রিসাইক্লিং কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী, এসব বর্জ্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত মানুষ এবং কারখানার কর্মী থেকে শুরু করে এখানে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়কারী মিলে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক বলেন, এই রিসাইক্লিং কারখানার পাশাপাশি এখানে কঠিন বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাটি ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনওপিএস’র সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম। কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এই জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে ব্র্যাক। প্লিজ প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণের গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় আঞ্চলিক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করছে।

৫ হাজার ২৮০ বর্গফুট আয়তনের এই কারখানায় প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কেজি পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এখানে রয়েছে দৈনিক ২ হাজার লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা (ইটিপি), সোলার পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম, ফায়ার সেফটি সিস্টেম, একটি ইলেকট্রিক সাবস্টেশন এবং ২৪ ঘণ্টার সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা। এই কারখানাটি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নারী বর্জ্য সংগ্রাহকদের ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি খালবিল ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ কমিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুধু হাসিনা বললে সম্মান দেওয়া হবে, তাকে ‘মনস্টার হাসিনা’ বলতে হবে : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম আদালত ভবনে সরকারবিরোধী স্লোগান, আটক ৭