চকরিয়ায় গ্যারেজ মালিককে পিটিয়ে হত্যা

জমির বিরোধের জেরে ভাইপোর ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল চাচার

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১:২৯ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পৃথক স্থানে পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলা, মারধর ও ছুরিকাঘাতে দুইজন খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

একজনকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় সড়কের ধারে। অপরজন খুন হন জমির বিরোধ নিয়ে আপন দুই ভাইয়ের ঝগড়া চলাকালে ভাইপোর ছুরিকাঘাতে।

খবর পেয়ে পুলিশ দুইজনের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে না পারলেও ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়- শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে সিএনজি অটোরিকশা চালক হারুণুর রশীদ ও বড় ভাই শেখ আহমদের মধ্যে জায়গার বিরোধ নিয়ে তুমুল ঝগড়া হচ্ছিল। এ সময় শেখ আহমদের ছেলে সন্ত্রাসী খোকা চাচা হারুণুর রশীদকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। নিহত হারুণুর রশীদ (৪৫) ফুলতলা গ্রামের ছাবের আহমদের পুত্র। এই ঘটনার পর থেকে বড় ভাই শেখ আহমদ ও তার ছেলে খোকা পলাতক রয়েছে।

এদিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দুইটার দিকে গিয়াস উদ্দিন (৪৫) নামের ইজিবাইক (টমটম) গ্যারেজের মালিককে অপহরণের পর পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর কাছে সড়কের ধারে।

আজ শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশের খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে বিবস্ত্র অবস্থায় লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

অপহরণের পর খুনের শিকার গিয়াস উদ্দিন উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের দিঘির পাড়ের গোলাম কাদেরের পুত্র।

গ্যারেজ মালিক গিয়াস উদ্দিনের পরিবার জানায়- শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে স্থানীয় মিন্টুসহ মোটরসাইকেল যোগে চিরিঙ্গা পৌরশহরে যান গিয়াস উদ্দিন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের জনৈক তৌহিদের নেতৃত্বে পাঁচজন মিলে কারগাড়ি নিয়ে মাতামুহুরী সেতু এলাকায় মোটরসাইকেলকে ব্যারিকেড দেয়।

এ সময় কার গাড়ি থেকে তৌহিদেরা নেমে মোটরসাইকেল আরোহী মিন্টুকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়াস উদ্দিনকে কার গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এর পর ‎মিন্টু ঘটনাস্থল থেকে গিয়ে বিষয়টি পরিবারকে জানায়।

‎নিহতের স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম বলেন, ‘আমার স্বামীকে অপহরণের বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানানোর পরে থানায় অবগত করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করে। আজ (শনিবার) ভোরে মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতু এলাকা থেকে আমার স্বামীর লাশ উদ্ধার করেন চকরিয়া থানার পুলিশ।’

‎গিয়াস উদ্দিনের মা আনোয়ারা বেগম জানান-স্থানীয় দিঘির পাড়ে আমার ছেলের টমটম চার্জিং স্টেশন রয়েছে। এখানে যেসব গাড়ি চার্জ দিতে আসে তাদেরকে টার্গেট করে আসছিল চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা থেকে আমাদের এলাকায় এসে নতুন বাড়ি করা সন্ত্রাসী ও গরুচোর খ্যাত তৌহিদ। সে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক সংঘটিত করতে উঠতি বয়সের টোকাই ছেলেদের নিয়ে গ্যাং তৈরি করে। সেই গ্যাং দিয়ে তৌহিদ গরু চুরি, মানুষের বাড়িঘরে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল।

এ নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করে আসছিলেন গিয়াস উদ্দিন। ইতোপূর্বে তৌহিদের নেতৃত্বে গ্যাংটি হামলা করে গিয়াস উদ্দিনের ওপর। এই ঘটনায় থানায় মামলা করলে ক্ষিপ্ত হন তৌহিদেরা। এর জের ধরে গিয়াস উদ্দিনকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ মাতামুহুরী সেতুর কাছে ফেলে যায় ভোর রাতে।

‎চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, পূর্বশত্রুতার ও জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। টমটম গ্যারেজ মালিককে ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে বদরখালীতে ভাতিজা কর্তৃক আপন চাচাকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। পৃথক এই খুনের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে রয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় হেফজ খানার ছাত্রের লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি