বার্তা পরিষ্কার, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জনগণ

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা মানে গণতন্ত্রকে বাধা দেয়া বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র ফেরার পথে বাধা দেয়া মানে বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা বন্ধ করা এবং আগামীতে মানুষের রাজনৈতিক সাংবিধানিক অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশের মানুষ যাকে ইচ্ছে নির্বাচিত করতে পারবে। এখন কেউ যদি মনে করে তারা নির্বাচিত হতে পারবে না, সেজন্য নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, সেটা তাদের সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষের সমস্যা নয়। সুতরাং বার্তা পরিষ্কার, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সমস্ত জনগণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ধানের শীষের জোয়ার শুরু হয়েছে।

তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি আলমাস সিনেমার সামনে দলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম। বক্তব্য দেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।

সমাবেশ শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আলমাস সিনেমার সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে কাজীর দেউড়ি, জুবলী রোড, এনায়েত বাজার ও তিন পুলের মাথা হয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

আমীর খসরু বলেন, এখন আমাদের প্রথম কাজ হবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। গণতন্ত্র ফিরে আনতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মালিকানার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ হবে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া পাওয়ার কথাগুলো বলতে পারবে, যা এখন কেউ বলতে পারছে না।

এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে খসরু বলেন, আপনাদেরকে গ্রামেগঞ্জে যেতে হবে, তারেক রহমানের নির্দেশিত খালকাটা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। প্রত্যেক এলাকার খালগুলো কেটে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে হবে। সবকিছু সমাধান হবে ইনশাল্লাহ। তারেক রহমান ৩০ কোটি গাছ লাগাবেন। সকলে মিলে আগামী বাংলাদেশ করতে হবে। নেতা নয়, সকলের অবদান থাকতে হবে। এজন্য রাজনীতির সাথে সাথে আমরা অর্থনীতিকেও গণতন্ত্রের কথাও বলছি।

তিনি বলেন, আজকে দক্ষিণ এশিয়াতে বিএনপি সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এটার কারণ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, উন্নয়নের উদ্যোগ, চাষি, কৃষক শ্রমিক পেশাজীবী সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। শহীদ জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চিন্তা চেতনায়, ভাবনায়, উদ্যোগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় দিয়েছিলেন। তা পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন ফ্যাসিস্টমুক্ত এবং স্বৈরাচারমুক্ত দেশে আবার সেই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান।

খসরু বলেন, ইতোমধ্যে দেশের সমস্ত মানুষ তারেক রহমানের প্রতিটি স্বপ্নের সাথে নিজেদেরকে দেখতে পাচ্ছে। স্বপ্নগুলো কী? এক নম্বর স্বপ্ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান। তারেক রহমান বলেছেন, ক্ষমতায় দেশের মানুষ যদি আমাদের সরকারের দায়িত্ব দেয়, প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। চাকরি করবে, ব্যবসা করবে, দেশে কর্মসংস্থান, বাইরে কর্মসংস্থান সবকিছুর পরিকল্পনা ইতোমধ্যে সমাপ্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসার সব ধরনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি যদি দায়িত্ব পায়, দেশের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পকেট থেকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। দেশের মানুষের শিক্ষা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

খসরু বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য বিশাল প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। বাংলাদেশে কামারকুমার থেকে শুরু করে যারা কাজ করছে, তাদের জন্য বিশাল প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে ইনশাল্লাহ। বাড়িতে বসে পণ্য তৈরি করে বিদেশি রপ্তানি করার ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শেয়ার বাজার, ব্যাংকিংসহ সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সবাই যাতে এই সুযোগ পায়, সবাই যাতে ব্যবসা এবং চাকরিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হবে।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আমরা এখন নির্বাচনের সড়কে ঢুকেছি। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে। দেশের মানুষ ধানের শীষের অপেক্ষায় আছে। লক্ষ জনতা আজকে এখানে জমায়েত হয়েছে শুধুমাত্র গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রায় আমরা নেমেছি, সেটাকে সফলভাবে আরো বেশি সমাদর করতে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতৃত্বে দেশের মানুষ ভোটাধিকার রক্ষার সংগ্রাম করেছে। আজকে হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, কিছু কিছু শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের জন্য কোনো জায়গা দেওয়া হবে না। গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে আমরা চলছি, দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ পথে যারা বাধাগ্রস্ত করবে আগামীদিনে দেশের মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে।

ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, আজকে দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন শেষ করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী দিনগুলো চলতে হবে। কোনো শক্তি যাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, একটি মহল আছে তারা রাজনীতি করবে, কিন্তু ভোটে যাবে না। গণতন্ত্র বিশ্বাস করবে না। তারা রাজনীতি করবে জনগণকে বাইরে রেখে। যেটা হাসিনা বারবার করেছে।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই দিন থেকে শপথ নিতে হবে। সকলে যার যার এলাকায় যেতে হবে, মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। আগামী দিনের যে কর্মসূচি, দেশের মানুষের সকল রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে রূপরেখা বিএনপি তৈরি করেছে, তা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনাসহ ১৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধঅভিযোগ নিতে রাজি নই, শেষ পর্যন্ত লড়াই করব : সিইসি