সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে গতকাল শনিবার সকালে নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রায় ভক্তরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নানা যুগল মূর্তি, শিশু–কিশোররা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার সাজে নানান রঙে সজ্জিত হয়ে ঢাক–ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে। এর আগে বেলুন উড়িয়ে জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন অতিথিরা। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক। তিনি বলেন, আজ থেকে যে কদিন জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে, আমি একান্তভাবে কামনা করি চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ত থেকে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রাকে শক্তি এবং সাহস যোগাবে। তিনি বলেন, যে সমস্ত দাবি এখানে উত্থাপন করা হয়েছে, আশা করছি আগামী দিনের যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা আপনাদেরই সরকার হবে। আপনাদের দাবি পূরণে তারা কাজ করবে।
শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সবাইকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেইফ সিটি গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামীর চট্টগ্রাম শহর হবে সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি–পেশার মানুষের নিরাপদ শহর। তিনি বলেন, শ্রীকৃষ্ণ মানুষের জন্য দিয়ে গেছেন মানবপ্রেমের অবিনশ্বর বাণী। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই–এ কথাটা যেন আমরা ধারণ করি, লালন করি এবং নিজের জীবনে সেটা যেন পালন করি। এই দেশ হিন্দুর, এই দেশ খ্রিস্টানের, এই দেশ বৌদ্ধের, এই দেশ মুসলমানের। আমার যেটুকু অংশ, আমার প্রতিটি ভাইয়ের অংশ ঠিক ততটুকু। এই কথাটা যদি আমরা স্মরণ রাখি, তাহলে যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি সেই বাংলাদেশ অর্জন করতে পারব।
অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক ছিলেন পাঁচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ। অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত। জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আর কে দাশ রুপুর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ। মহাশোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব ধর তমাল ও শিমুল মুহুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি চন্দন দাশ, বিদ্যালাল শীল, অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, অর্থ সম্পাদক রতন আচার্য্য, মহানগর জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, দক্ষিণ জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুল ঘোষ বাবুন, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাজীব বিশ্বাস, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় উপ–অর্থ সম্পাদক সুমন ঘোষ বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দাশ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানুরাম দে, উপ–দপ্তর সম্পাদক বাবলু কুমার নাথ প্রমুখ।
শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি, কোতোয়ালী মোড়, নিউ মার্কেট, ডিসি হিল হয়ে জেএম সেন হলে এসে শেষ হয়। এরপর দুপুর ২টায় জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মাতৃসম্মেলন। একই জায়গায় বিকালে ধর্ম মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রাত ৮টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস শেষে আজ ১৭ আগস্ট ও আগামীকাল ১৮ আগস্ট চলবে ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্ত্তন।
