দেশে আবারও একদলীয় শাসনের নতুন ছক আঁকা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। তিনি বলেন, আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে একটি মহল ভিত্তিহীন অজুহাতে আবারও একটি প্রহসনের নির্বাচন সাজাতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জনগণকে বাইরে রেখে, শহীদদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এই দেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না।
তিনি গতকাল বিকেলে ঐতিহাসিক জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে কালো ব্যাচ ধারণ ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহমেদ সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এম এ নাজিম উদ্দিন ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।
সমাবেশের পর কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে এটি শেষ হয়। মৌন মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করে না। বিএনপির রাজনীতি দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য। তিনি বলেন, শহীদদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন ও সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি বদ্ধপরিকর। শহীদদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে।
এসময় শহীদদের হত্যার বিচার এখনো না হওয়াকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা মন্তব্য করে শামীম বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই বিচার আদায় করাই হবে বিএনপির আগামী দিনের প্রধান লক্ষ্য।
ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, জাতি এখন একটি নতুন নির্বাচনকালীন সময়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। নির্বাচনের পূর্ব ঘোষণা এসেছে, কিন্তু জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা। শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জনগণের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। তাই ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সত্যিকারের নির্বাচন আয়োজনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদরা ছিলেন জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধা। কিন্তু আজও তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। আমরা যখন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলি, তারা ব্যথাভরা কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সন্তানের রক্তের মূল্য কি এই নীরবতা?’ এই প্রশ্ন আমাদের বিবেককে কাঁপিয়ে দেয়। শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা ও বিচারের দাবিই আজ আমাদের আন্দোলনের মূল প্রেরণা। জুলাই শহীদরা আমাদের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন। আগামীর বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত, বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায়, জুলাই শহীদদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বিএনপি শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে।
নাজিমুর রহমান বলেন, শহীদদের রক্ত শুধু স্মৃতির অংশ নয়, এটি আমাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক অনুপ্রেরণা। তাই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের আন্দোলন আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। এখনই সময় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার।