নির্মাণশিল্পের আলোকধারায় স্বপ্নের ৫০ বছর

কনকর্ড

| রবিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৫ at ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আপনি কি কখনো ঢাকার আকাশপানে তাকিয়ে ঢাকার দিগন্ত দেখেছেন? মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ অট্টালিকা, যা এই শহরকে নাম দিচ্ছেমেগা সিটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সবকিছু কিভাবে শুরু হলো? প্রথম পদক্ষেপ কে নিল? বাংলাদেশে প্রথম উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ কারা করেছিল? উত্তরটি অনেকেরই জানা : কনকর্ড।

যদি আপনি ঢাকার উত্থান শুরু থেকেই দেখে থাকেন, তবে এই নামটি আপনি জানেন। আর যদি আপনি শুধুমাত্র এর পরের গল্প দেখেছেন, তবে এখনই সময় শুরুটা জানার। এই সবকিছুরই ভিত্তিকনকর্ড। বাংলাদেশি শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ পূর্ণ করল তার ৫০ বছর। যার গল্প, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

১৯৭৩ সাল, বাংলাদেশ স্বাধীনতার দু’বছর পরে, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বেশকিছু সেতু পুনঃনির্মাণের মধ্য দিয়ে কনকর্ড তার পথচলা শুরু করে। সেই সময় পরিস্থিতি ছিল খুবই কঠিন। জীবনকে নতুন করে গুছিয়ে বেচে থাকার প্রয়াস। পাশাপাশি চলছে দেশ পুনঃনির্মাণের কাজ। কনকর্ড তাদেরই মধ্যে অন্যতম একটি নাম, যে নামটি জড়িয়ে আছে দেশ পুনঃনির্মাণের শুরু থেকেই। সেই নীরব, দৃঢ় সংকল্পের প্রচেষ্টা নগর ও মানুষকে আবার সংযুক্ত করার শুরুটা তখনই শুরু হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে এস.এম. কামাল উদ্দিনের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজও তিনি বিচক্ষণতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। একটি জাতির সাথে কোন প্রতিষ্ঠানের বেড়ে ওঠার জন্য একটি উদাহরণ প্রয়োজন হলে, কনকর্ড গ্রুপ হবে সেই নাম। বন্দরের পুনঃনির্মাণ, কারখানা ভবন ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নিয়ে কাজ করাসহ অনেক নির্মাণের সাথে জড়িয়ে আছে কনকর্ড। এরপর, আশির দশকে, ঢাকায় প্রথম উচ্চঅট্টালিকা২০ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ভবন নির্মাণের শুরু হয় রাজধানীর মতিঝিলএ। এটি নতুন রাজধানীর ভাবমূর্তির একটি ঝলক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যদি কোন প্রকল্পের মধ্যে কনকর্ডের ইতিহাসের স্থান সবচেয়ে স্পষ্ট হয়, সেটি হলো ১৯৮২ সালে সাভারে নির্মিত জাতীয় স্মৃতি সৌধ। বিশিষ্ট স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের নকশায় ও কনকর্ডের নির্মাণে মাত্র ৮৯ দিনে তৈরি এই স্মৃতিস্তস্ভ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ। অনেকের অজানা, এই স্মৃতিস্তস্ভ নির্মাণ কনকর্ডের অবদানকনকর্ডের গল্পের প্রথম পাতায় যার স্থান। টেকসই উন্নয়ন যখন স্বাভাবিক অগ্রাধিকারও হয়ে উঠেনি, তখন থেকেই তারা ভবন নির্মাণের পদ্ধতিকে বদলে দিয়েছে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব গ্রিন ব্রিক বা ব্লক চালু করে, যা প্রচলিত অগ্নিগর্ভ ইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তখনকার সময়ে, চিমনি ব্যবহার আমাদের পরিবেশ দূষিত করছিল এবং ক্ষতি হচ্ছিলো জনস্বাস্থ্যেরও। সেই পরিস্থিতিতে কনকর্ড একটি উন্নত পথ বেছে নিয়েছিল কেবল কল্পনায় নয়, বাস্তবেও। তারা পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি ইট তাদের প্রকল্পে ব্যবহার করে দেশের প্রথম নির্মাতা হিসেবে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ প্রচলন শুরু করে। আজ, যখন সরকারের পক্ষ থেকে ধীরে ধীরে ইটের ভাটার ইটের ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন কনকর্ডের সেই সিদ্ধান্ত নতুন করে সবার প্রশংসা কুড়াচ্ছে। কনকর্ড এখন দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্রীন ব্লকের উৎপাদক ও ব্যবহারকারী।

রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের মাধ্যমে কনকর্ড ১০,০০০এরও বেশি পরিবারকে বাসস্থান নির্মাণ করে দিয়েছে। এই পরিবারগুলোর জন্য প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্ট কেবল তাদের আবাস নয়হলো জীবনেরই অংশ, যেখানে সন্তানরা বড় হয়, যেখানে ঈদ ও জন্মদিন পালিত হয় এবং যেখানে প্রতিবেশীরা বন্ধুতে পরিণত হয়। কনকর্ড শুধু মানুষকে আবাস দেয়নি, তাদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকার এক মাধ্যমও বটে। ২০০২ সালে, বাংলাদেশে প্রথম বিশ্বমানের থিম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম উদ্বোধনের মাধ্যমে এটি নতুন এক আনন্দ ও কল্পনার জগতে পা রাখে। অসংখ্য শিশুদের জন্য, এটি ছিল তাদের প্রথম রোলার কোস্টার অভিজ্ঞতা। পরিবারের জন্য এটি স্মৃতি তৈরির স্থান হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামে, কনকর্ড ফয়’স লেক এর প্রতিষ্ঠা করে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ করে এবং অতিথিদের জন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা তৈরি করে। প্রতিষ্ঠান বেড়ে ওঠার পাশাপাশি প্রসারিত হচ্ছিলো তার স্বপ্ন। প্রসারিত হয় ব্যবসায়িক পরিধি, নির্মাণ সামগ্রী থেকে পর্যটন, আর্কিটেকচার থেকে যোগাযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই মূল্যবোধ নিযয়ে কাজ করেছে: উদ্ভাবন, গুণমান এবং দায়িত্ব। আজ, কনকর্ড বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। শুধুমাত্র এটি কী নির্মাণ করে সেটির জন্য নয় বরং এটি এর অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং দৈনন্দিন জীবনের অবদানেরই স্বীকৃতি। ১০ জুলাই কনকর্ড তাদের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে স্মরণীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কনকর্ড গ্রুপের ভাইস চেয়ারপার্সন মিসেস ফারিদা কামাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার কামাল, পরিচালক কমপ্লায়েন্স মিস নাজিয়া করিশমা কামালসহ কনকর্ডের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং সারা দেশ থেকে আগত কর্মীরা। এই দিনটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়; ছিল গল্প, আনন্দ, কর্মব্যস্ততা এবং আত্ম অনুভূতির এক মিলনমেলা। কর্মীরা দিনব্যাপী একটি স্মরণীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে কনকর্ড পরিবারকে গড়ে তোলার পেছনের মানুষদের সম্মান জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে কনকর্ড সবসময় কর্মীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। এই বিশেষ দিনে কনকর্ডের নেতৃত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন যে, কর্মীদের উন্নয়ন ও সুস্থতাই তাদের মূল ভিত্তি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যমান কর্মসূচিগুলোর পরিধি আরও বাড়ানো হবে এবং নতুন নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা কর্মীদের আরও অনুপ্রেরণা যোগাবে। এই নতুন অধ্যায়ে পা দিয়ে কনকর্ড আগামীর পথচলায় আরও অনেক কিছু করতে চায় তাদের কর্মীদের জন্যযাঁরা সবসময় এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূলে ছিলেন। ৫০ বছর পূর্ণ হওয়া কনকর্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্জন। কিন্তু দেশের উন্নয়ন পটভূমিতে অবদান রেখে ৫০ বছর পার হওয়া সত্যিই খুবই অসাধারণ। বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রতি যার ছিল পূর্ণ আন্তরিকতা। সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার জন্য কনকর্ড পেয়েছে দেশীবিদেশী অসংখ্য পুরস্কার। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৩ জুলাই : মামলা প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম, রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য, কিছু অমীমাংসিত বলছে ঢাকা