নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম শীঘ্রই

কক্ষ বরাদ্দ ও সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ, স্থানান্তর হচ্ছে মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৫০১ নং কক্ষেই চলবে কাজ

হাবীবুর রহমান | রবিবার , ২২ জুন, ২০২৫ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে সদ্য গঠিত নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য কক্ষ বরাদ্দ ও সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত হয়েছে অধিক্ষেত্রও। তবে মামলা স্থানান্তরসহ কিছু কারণে এ দুটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন সৃষ্ট দুই অর্থঋণ আদালতের জন্য আগেই বিচারক নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গত কয়েকদিনে কক্ষ বরাদ্দ ও সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের কাজটিও সম্পন্ন হয়েছে। অর্থঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে এতদিন ধরে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসা একমাত্র অর্থঋণ আদালতটি থেকে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতে মামলা স্থানান্তরের কাজ চলছে এখন। পাশাপাশি কক্ষসজ্জা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপনসহ প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতির কাজও চলছে। ফলে নতুন এ দুটি আদালতের পূর্ণাঙ্গ বিচারিক কার্যক্রম তথা বিচারিক শুনানি অনুষ্ঠিত হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। চট্টগ্রামে আগে ছিল মাত্র একটি অর্থঋণ আদালত, যেখানে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত ৬ হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন দুটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে একমাত্র অর্থঋণ আদালতটির ওপর চাপ কমবে, মামলা জটও কমবে। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছেন আইনজীবীরা।

আদালত সূত্র জানায়, নতুন আদালত সৃষ্টি এবং বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পর কক্ষ বরাদ্দ ও সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি ঝুলেছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার নতুন এ দুটি আদালতের জন্য আদালত চত্বরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষটি বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা জজের কার্যালয়। আপাতত এ কক্ষটিতেই চলবে নতুন এ দুটি আদালতের কার্যক্রম। পাশাপাশি এ দুটি আদালতের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সহায়ক কর্মচারীদের।

আদালত সূত্র জানায়, নতুন দুটিসহ তিনটি অর্থঋণ আদালতকে অর্থঋণ আদালত ১, ২ ও ৩ হিসেবে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ ও ৩এর সেরাস্তাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. মোক্তাদির মাওলা এবং বেঞ্চ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রেজাউল করিম। আর ১এর সেরাস্তাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. সাইফুদ্দিন পারভেজ ও বেঞ্চ সহকারী হিসেবে আগে থেকেই আছেন মোহাম্মদ এরশাদ।

আদালত সূত্র আরো জানায়, অর্থঋণ আদালত ১, ২ ও ৩এর জন্য অধিক্ষেত্রও চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অর্থঋণ আদালত ১এ পরিচালিত হবে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এঙ্মি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এবি ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের মামলা।

অর্থঋণ আদালত ২এ বিডিবিএল ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ডাচবাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, ওরি ব্যাংক, নগদ ফাইন্যান্স, অভিভা ফাইন্যান্স, অগ্রণী এমএমই ফাইন্যান্সিং, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সিভিসি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্ব ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, লঙ্কান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স ও মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মামলা পরিচালিত হবে।

এছাড়া অর্থঋণ আদালত ৩এ পরিচালিত হবে জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, এনবিএসি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফিনিঙ ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমন্টে, মাইডাস ফাইন্যান্সিং, সৌদিবাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমন্টে, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, ফার্স্ট লিজিং ও ওমান বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের মামলা।

অর্থঋণ আদালত ২ ও ৩এর বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আখন্দ আজাদীকে বলেন, আগামী রোববার (আজ) অথবা পরদিন সোমবার (আগামীকাল) বিচারক যোগদান করবেন। এর পরদিন তথা আগামী মঙ্গলবার নতুন দুই অর্থঋণ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এখন মামলা স্থানান্তরসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা কর্তৃক চট্টগ্রামে দুটি অর্থঋণ আদালত বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে উক্ত দুই আদালতে দুজন বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৬
পরবর্তী নিবন্ধস্বামী বলছে জা’র সাথে ঝগড়ার পর আত্মহত্যা, বাবার দাবি হত্যা