নির্মাণের দীর্ঘ ২৭ বছর পর পরিষ্কার করা হচ্ছে নগরের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের বক্স কালভার্টটি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় গৃহীত একটি প্রকল্পের আওতায় নৌ বাহিনীর সহায়তায় এটি পরিষ্কার করছে। গত মাসে শুরু হয়েছে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বক্স কালভার্ট পরিষ্কার কার্যক্রম। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বক্স কালভার্টটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার হলে আগ্রাবাদসহ আশেপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে। বক্স কালভার্ট পরিষ্কার প্রকল্পটির আওতায় আগ্রাবাদ নাসির খাল ও লাল মিয়া ছড়াও পরিষ্কার করা হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে বক্স কালভার্ট পরিষ্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পদির্শন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় তিনি মিথেন ও ফসজিন গ্যাস থাকায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে বক্স কালভার্টিটি পরিষ্কার করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার অপরিকল্পিতভাবে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করে। এটি খুলে যে পরিষ্কার করা হবে, এ ধরনের কোনো পথ তারা রাখেনি। দীর্ঘদিন ধরে এ বক্স কালভার্টে কোনো মেরামত বা পরিষ্কার কার্যক্রম হয়নি।
তিনি বলেন, প্রায় ২৭ বছর পর এই বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হাত দিয়েছি। এ জন্য প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে, নৌ বাহিনী এ প্রকল্পে কাজ করছে। মেয়র বলেন, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বক্স কালভার্টের ১৭টি স্ল্যাবের মধ্যে ৭টি উন্মুক্ত করে পরিষ্কার করা হয়েছে, বাকি ১০টি স্ল্যাবেও কাজ চলমান। গত ১৭ মে কাজ শুরু হয়েছে। গত এক মাসে ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরো ১৫–২০ দিন লাগবে। তিনি বলেন, একটু আগে জোয়ার এসেছে। জোয়ারের কারণে কাজ সার্বক্ষণিক কাজও করাও যাচ্ছে না। এই বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করার কাজটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ফায়ার সার্ভিস সবসময় প্রস্তত আছে। নৌ বাহিনীর ডুবুরিরাও সবসময় প্রস্তুত থাকে। যাতে কেউ ডুবে গেলে দ্রুত উদ্ধার করতে পারে। সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে কাজটা করে যাচ্ছি। আমি নৌ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রজেক্টে কাজ করছেন।
এগুলো মোকাবেলা করে চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে কাজগুলো করা হচ্ছে। এটা অনেক গভীর। এখানে অনেকে ভয়ে প্রবেশ করারও সাহস করেনি। কিন্তু নৌ বাহিনী এ কাজটি করছে।
তিনি বলেন, বঙ কালভার্টটি ২ দশমিক ৯ কিলামিটার দীর্ঘ, প্রায় পদ্মা সেতুর সমান। এতবড় একটা বঙ কালভার্ট এক–দেড় মাসে ক্লিন করাও বিশাল ব্যাপার। এখানে নাসির খাল ও লাল মিয়া ছড়াও যুক্ত হয়েছে। এখানে যদি জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো কাজ করতে হয় সেটাও করব। সরকার থেকে যদি বরাদ্দ নাও পাই কর্পোরেশনের অর্থায়নে করব।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে আমরা সমস্ত সেবা সংস্থাগুলো এক ছাতার নিচে কাজ করছি। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন, সিডিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সকল সেবা প্রদানকারী সংস্থার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ খালের মুখগুলো পরিষ্কার করছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমার মূল লক্ষ্য সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম করা। ইতোমধ্যে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সম্প্রতি ১৯০–১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেসব জায়গায় আগে জলাবদ্ধতা হতো, সেখানে এবার মহান রাব্বুল আ’লামীনের দয়ায় হয় নি। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে আগে প্রচুর জলাবদ্ধতা হতো। সম্প্রতি বৃষ্টিতেও কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। তাই বঙ কালভার্ট পরিষ্কারে হাত দিয়েছি।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশন কিছু খাল পরিষ্কার করেছে এবং ১৫০টি প্রজেক্টের আওতায় নালা–নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করেছে, যা এবার নগরীর বৃষ্টির পানিকে দ্রুত নিষ্কাশিত করে নগরে জলাবদ্ধতা হতে দেয়নি। সামনে আরও ২০০টি ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে খাল–নালাগুলো পরিষ্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের ১৬০০ কিলোমিটার নালা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১০ কোটি টাকায় ২৪টি খাল ক্লিন করেছি। ৮ কোটি টাকায় নালা পরিষ্কার করেছি। কাজেই বলতে পারি, স্বল্প টাকা ব্যয় করে বিশাল কাজ করেছি আমরা। এটা সম্ভব হয়েছে সততা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা এবং মনিটরিং করার কারণে। এ কাজগুলো অব্যাহত থাকবে। যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি তাহলে সামনেও অবশ্যই ভালো একটা রেজাল্ট পাব।
পরিদর্শনকালে সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বঙ কালভার্ট সংস্কার প্রকল্পের পিডি কমান্ডার মো. এনামুল ইসলাম ও সাবেক কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান উপস্থিত ছিলেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বঙ কালভার্টটির উপরের স্তর জায়গা ভেদে মূল সড়কের প্রায় ৪ থেকে ৬ ফুট গভীরে। কালভার্টটির চওড়া সাড়ে ৩ মিটার। বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৮ সালে ২৯ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় বঙ কালভার্ট। এরপর ২৭ বছর পার হলেও কখনোই সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা হয়নি বঙ কালভার্টটি। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে এ বঙ কালভার্ট পরিষ্কারের ঘোষণা দিয়েও এ বিষয়ে কোনো উদ্যেগ নেয়নি সিডিএ। এতে ১০ ফুট গভীর বঙ কালভার্টটির সিংহভাগই ভরাট হয়ে আছে। এতে বাধাগ্রস্ত হয় পানি নিষ্কাশনে। সর্বশেষ মেয়র ড. শাহাদাত এটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ বঙ কালভার্ট দিয়ে আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, গোসাইলডাঙ্গা, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী ও দেওয়ানহাটসহ বেশ কিছু এলাকার পানি প্রবাহিত হয়। টাইগারপাস এলাকার পাহাড় থেকে যেসব পানি নেমে আসে সেগুলো দেওয়ানহাট হয়েও বঙ কালর্ভাটটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এটি পরিষ্কার থাকলে পানি দ্রুত নেমে যাবে এবং জলাবদ্ধতাও কমে আসবে।