চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা–পুত্রসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে রশিদনগর ইউনিয়নের জেটি রাস্তা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আরো ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী দক্ষিণ পাতলী এলাকার হাবিব উল্লাহ (৫৫) ও তার ছেলে শিশু রিয়াদ এবং রামুর পূর্ব রাজারকুল এলাকার হিমাংসু বড়ুয়ার মেয়ে রিমঝিম বড়ুয়া (২৩)। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি নাসির উদ্দীন জানান, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী পূরবী পরিবহনের একটি বাস ও কক্সবাজারমুখী মালবাহী একটি কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বাসটি উল্টে সড়কের পাশে ধানখেতে পড়ে যায়। এতে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার মামাতো ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন বড়ুয়া জানান, রিমঝিম বড়ুয়া কক্সবাজার সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে ঠিক হয়। বর চট্টগ্রামের পটিয়ার ভান্ডারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী যুবক সানি বড়ুয়া। আগামী ৬ জুলাই বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
তিনি জানান, গতকাল দুই পরিবারের সদস্যরা মিলে চট্টগ্রাম থেকে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা ছিল। সে মোতাবেক সকালে পুবরী পরিবহনের একটি বাসে একাই রামু থেকে চট্টগ্রামের যাচ্ছিল রিমঝিম। তার বিবাহিত এক বোন ও এক ছোট বোন চট্টগ্রামে থাকে। তাদের সাথে নিয়ে বরের পরিবারের লোকজনসহ কেনাকাটা করার কথা ছিল।
নিহত হাবিব উল্লাহর বড় ভাই নুরুজ্জামান জানান, হাবিব উল্লাহর ছেলে মো. রিয়াদ পটিয়ার একটি মাদ্রাসায় হেফজ পড়ছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ছেলেকে দিতে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা–পুত্র দুজনই মারা গেল।
আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বিকালের দিকে তিনটি মরদেহ পরিবারের হস্তান্তর করা হয়। রাতেই তিনজনকে সমাহিত করা হয়।
ছেলেকে হাফেজ বানানো হলো না : ছেলেকে হাফেজ বানানোর স্বপ্ন ছিল হাবিব উল্লাহর। সেই স্বপ্ন পূরণে ছেলেকে পড়াচ্ছিলেন পটিয়ার প্রসিদ্ধ মাদ্রাসায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তার। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে ঝরে গেল পিতা–পুত্রের প্রাণ।
রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন জানান, নিহত হাবিব উল্লাহ রামুর হাবিব বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী। স্বজনরা জানান, ঈদের ছুটি শেষে ছেলে রিয়াদকে পটিয়া মাদরাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পিতা হাবিব উল্লাহ। কিন্তু পথে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। ছেলেটা হাফেজ হবে–এমন আশা নিয়ে বুক বেঁধেছিলেন হাবিব উল্লাহ।
হাবিব উল্লাহর ফুফাতো ভাই ও স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের অনেক ইচ্ছা ছিল ছেলেকে হাফেজ বানানোর। একইসাথে ছেলের পড়া যাতে ভালো হয়, তাই পটিয়ার ভালো মাদ্রাসায় ভর্তি করায়। নিয়মিত ছেলেকে দেখতে মাদ্রাসায় যেতেন। ঈদুল আজহার আগে নিজে গিয়ে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ছুটি শেষে আবার দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই যাত্রা আর শেষ হলো না। এটি অসম্পন্ন রেখেই ছেলেকে সাথে নিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন আমার ভাই। পিতা–পুত্র দুজনকে হারিয়ে পরিবার ও স্বজনরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। এলাকার মানুষও কান্না করছেন।