চকরিয়ায় সড়কের পাশ থেকে ক্ষতবিক্ষত এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুলবুল আক্তার (২৬) নামের এ নারীর বাড়ি বাঁশখালী বলে জানা গেছে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে মিনজু আক্তার (২৩) নামের একজন ও ফটিকছড়িতে তাসনোভা আক্তার নোভা (১৮) নামে অপর গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাতকানিয়া ও রাঙ্গুনিয়ায় উদ্ধার হয়েছে দুই তরুণের ঝুলন্ত লাশ। অন্যদিকে হাটহাজারীতে পরিত্যক্ত পুকুরে মিলল আগে থেকে নিখোঁজ এক বৃদ্ধার মরদেহ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
চকরিয়া : কঙবাজারের চকরিয়ায় সড়কের পাশ থেকে ক্ষতবিক্ষত বুলবুল আক্তার (২৬) নামে বাঁশখালীর এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের জখম দেখতে পায় পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আঞ্চলিক মহাসড়কের (এবিসি সড়ক) চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি এলাকার স্থানীয় লোকজন সড়কের পাশে ওই নারীর লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ সময় মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন চকরিয়া থানার এসআই আবুল খায়ের। তিনি জানান, ওই নারীর পেটে, পায়ে, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত বুলবুল আক্তার বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখিল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের টেকপাড়ার আবদুল করিমের কন্যা এবং একই এলাকার আবদুল গফুরের স্ত্রী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এবিসি সড়কের পূর্বপাশে এক নারীর লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার অভিজিত দাস ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াছিন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ছুরিকাঘাত করে ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াছিন মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক আজাদীকে জানান, বাঁশখালী থেকে ওই গৃহবধূকে অপহরণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনার পূর্বাপরও রয়েছে। তাই নিহতের স্বজনেরা চকরিয়া থানায় নয়, বাঁশখালী থানাতেই মামলা রুজু করবেন বলে জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি : মানিকছড়ির তিনটহরী গুচ্ছগ্রামে মিনজু আক্তার (২৩) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় গুচ্ছগ্রামের বাড়ির পাশ থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত মিনজু উপজেলার গোদাতলী এলাকার বাসিন্দা আহম্মদ নবীর মেয়ে ও দুই শিশু কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী–স্ত্রীর দ্বন্দ্ব থেকে মিনজু আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামী মো. ফরহাদ ও দেবর মো. সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৭টার দিকে বাড়ির অদূরে আম গাছের নিচে বসে মিনজুর লাশ নিয়ে বিলাপ করছিলেন স্বামী ফরহাদ। বিলাপ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে ফরহাদ তাদের জানায়– পারিবারিক কলহের জেরে মিনজু পাশে থাকা আম গাছে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
স্বামী এটিকে আত্মহত্যা বললেও মিনজুর পিতার পক্ষের লোকজনের দাবি– এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এ ব্যাপারে মানিকছড়ি থানার ওসি মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারণা দাম্পত্য কলহ থেকে ঐ নারী সুইসাইড করেছেন।
ফটিকছড়ি : ফটিকছড়িতে তাসনোভা আক্তার নোভা (১৮) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বদু তালুকদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গত ৬ মাস আগে ওই এলাকার ট্রাক ড্রাইভার মো. সাহাব উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয় নোভার। নোভাকে তার স্বামী এবং স্বামীর পরিবার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনেরা।
জানা যায়, তিন বছর বয়সে নোভার মা মারা যান। এরপর থেকে সে পাইন্দং ফরেস্টর দোকান এলাকায় তার নানার বাড়িতে বড় হয়। তার নানা এবং স্বজনেরা মিলে মাত্র ৬ মাস আগে তাকে একই এলাকার ছেলে সাহাব উদ্দিনের সাথে বিয়ে দেন। নানা আনোয়ার রহমান বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর একমাত্র নাতনি চাঁদনীকে (ডাক নাম) অতি আদর যত্নে বড় করেছি। ৬ মাস আগে তাকে সাহাব উদ্দিনের সাথে বিয়ে দিই। আজকে ঘটনার পর জামাই আমাকে ফোনে জানায় যে নাতনী আত্মহত্যা করেছে। পরে এসে দেখি নাতনীর লাশ তার রুমের ফ্যানের সাথে উড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে। ওরা নাতনীকে মেরে পালিয়ে গেছে। আমরা এ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের কঠিন বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. রফিক বলেন, খবর পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর সত্য ঘটনা জানা যাবে।
সাতকানিয়া : সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বৈতরণী এলাকায় সেগুন গাছের সাথে গলায় গামছা পেঁচানো এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম মোহাম্মদ মামুন (২১)। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বৈতরণী এলাকার একটি সেগুন বাগান থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মোহাম্মদ মামুন সৎ বাবা সিদ্দিক আহমদের বাড়িতে মায়ের সাথে থেকে দিনমজুর হিসেবে এলাকায় কাজ করতেন। তার বাবার নাম মৃত মোহাম্মদ নূর। কঙবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকায় তাদের বাড়ি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুনের বাবা মারা যাওয়ার পর মা সাতকানিয়ার পুরানগড়ের বৈতরণী এলাকার সিদ্দিক আহমদকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। আগের সংসারের সন্তান মামুনকেও নিয়ে আসেন দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মামুন বৈতরণীর বাড়িতে আসে। এ সময় সৎ বোনের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। পরে মামুন বাড়ি থেকে বের হয়ে রাতে আর ফিরে আসেননি। সৎ বাবা ও স্বজনেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। গত বুধবার দুপুরের দিকে স্থানীয় লোকজন সাঙ্গু নদের তীরবর্তী বৈতরণী এলাকায় সেগুন বাগানের একটি গাছে গলায় গামছা পেঁচানো ঝুলন্ত মামুনের লাশ দেখতে পায়। পরে বিকেলের দিকে খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে।
সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে মামুন নামের ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। আপাতত এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ায় মিঠুন দাশ (১৮) নামের এক তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোদারপাড় এলাকায় নিজ সেলুনের ভিতরে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড হালিমপুর গ্রামের স্বপন দাশের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে ঘটনাস্থলে স্বজনরা উপস্থিত হয়ে আহাজারি করছেন। শত শত মানুষ ভিড় করেন এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার জন্য। পুলিশ গ্রিল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছেন। এসময় স্বজনরা জানান, মিঠুন সারাদিন সেলুনে কাজ করে প্রতিদিন বাড়ি ফিরে গেলেও বুধবার রাতে যায়নি। সর্বশেষ এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মুঠোফোনে তার সাথে স্বজনদের শেষ কথা হয়। সকালে দোকান ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় বন্ধ ছিল। স্থানীয় লোকজন দোকান বন্ধ দেখে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তালা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা তার লাশ উদ্ধার করেন। প্রেম সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে হতাশা থেকে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতের বোন জামাই প্রদীপ দাশ জানান, তার অন্যস্থানে আলাদা একটি সেলুন দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে যাওয়ার সময় তারা একসাথেই বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু বুধবার রাতে যাওয়ার সময় তাকে নিতে গেলে তার অন্যত্র প্রোগ্রাম আছে বলে জানায় এবং রাতে ফিরেনি। সকালে এসে শুনি তার এই অবস্থা। তার সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক আছে বলে জানতাম। এছাড়া আর কোনো পারিবারিক কিংবা কারো সাথে ঝামেলা আছে বলে আমার জানা নেই।
এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার এসআই মো. রাকিবুল জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। এই ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
হাটহাজারী : হাটহাজারীতে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে ফাতেমা বেগম (৯০) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে মডেল থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেলের দিকে উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডস্থ মো. জামান চৌধুরী বাড়ির পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মারা যাওয়া ফাতেমা হাটহাজারী পৌরসভার মিরেরখীল এলাকার মৃত আহম্মদ মিয়ার স্ত্রী।
সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়ির পরিত্যক্ত পুকুরটিতে এক মহিলার লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। গত ২ জুন ওই বৃদ্ধা হাটহাজারী এলাকা থেকে নিখোঁজ হলে ৪ জুন তার ছেলে মো. হাসেম হাটহাজারী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ লাশ উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।