নগরীর কোর্টহিল এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের মামলার তদন্ত প্রায় শেষ দিকে। নৃশংস এ খুনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় চার্জশিট দাখিল করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মাহফুজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলা খুবই স্পর্শকাতর। এটি বিবেচনায় নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করছি। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন প্রায় শেষ দিকে। যে কোনো সময় এ মামলায় আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।
আদালত সূত্র জানায়, আলিফ খুনের মামলায় গতকালও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে তা হয়নি। আগামী ২৭ মে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোর্টহিল এলাকাতেই আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে খুন করা হয়েছে। বটিসহ নানা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল তাকে। এ রকম চাঞ্চল্যকর মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ ঘটনার ৫ মাস পেরিয়ে গেছে। এছাড়া শুভ কান্তি দাসসহ মামলার অনেক আসামি এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে কোনো প্রচেষ্টা নজরে পড়ছে না। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থার কাছে আমাদের আবেদন হচ্ছে, দ্রুত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা হোক আর দ্রুত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হোক।
নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তথা ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে সেদিন একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রামের তৎকালীন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম জামিন না–মঞ্জুর করে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ যখন চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাবে তখন আগে থেকে জড়ো হওয়া তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের গতিরোধ করে এবং প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছনে শুয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানকে কারাগারের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত পাড়ায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর করে। শুরু হয় সংঘাত। এক পর্যায়ে আদালতের প্রবেশ গেটের অদূরে মেথর পট্টি এলাকায় খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। তাকে উপর্যপুরি কোপানো হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৬টি ও আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি (হত্যা মামলা) ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি ও মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সর্বশেষ মো. এনামুল হক নামের একজন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতসূত্র জানায়, আলিফ হত্যার ঘটনায় মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, চন্দন দাশ, রিপন দাশ, আমান দাশ, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, দুর্লভ দাশ, সুমিত দাশ ও সনু মেথর, প্রেম নন্দন দাশ, রণব দাশ, বিধান দাশ, বিকাশ দাশ, রমিত দাশ, রাজ কাপুর, সামির দাশ, শিবকুমার দাশ, ওম দাশ, অজয় দাশ ও দেবী চরণ। এদের মধ্যে সুমিত, সনু, প্রেম ও রিপন তদন্তে প্রাপ্ত আসামি। বাকীরা এজহারভুক্ত আসামি বলে বাদীর আইনজীবী জানিয়েছেন।
আদালতসূত্র জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে তিনজন যথাক্রমে চন্দন দাশ, রিপন দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরমধ্যে রাজীব জবানবন্দিতে বলেন, রিপনই বঁটি দিয়ে আলিফকে কুপিয়েছেন। জবানবন্দিতে শীবা নামের একজনের তথ্য দিয়েছেন রাজীব ভট্টাচার্য্য। আর রিপন বলেছেন, তিনি আলিফের ঘাড়ে বঁটি দিয়ে উপর্যপুরি কুপিয়েছেন।