ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ একজন দুর্নীতিবাজের মধ্যে পার্থক্য নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। এরপর ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়। ১০ মার্চ এসব মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক। শিগগিরই আদালতে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
দুর্নীতির মামলার আসামি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক কোনো উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা–এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রসিকিউটর, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আমরা ইস্যু করি না, আদালত থেকে ইস্যু হয়। মামলা কোর্টে যাচ্ছে, খুব শিগগিরই আদালত থেকে ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট ইস্যু হবে। সেক্ষেত্রে আসামি যদি অনুপস্থিত থাকে, তাকে আনার জন্য আরও প্রক্রিয়া আছে। ইন্টারপোল আছে। অন্যান্য যত সব প্রক্রিয়া আছে সবগুলোই অনুসরণ করব। আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে, আমরা সেভাবেই এগোব।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো তফাত নেই। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি পলায়ন করে অন্যত্র চলে গেছেন, তার জন্যও যে প্রক্রিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার জন্যও একই প্রক্রিয়া। মামলা দায়েরের পর আদালতই আদেশ দেবে কী কী কাজ করতে হবে। আদালতের সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই দুদককে বলবে, স্বরাষ্ট্র–পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবে। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাব।
দুদকের মামলার অনেক আসামি দেশত্যাগ করেছেন, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, যেসব আসামি চলে গেছেন, দুদকের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করুন। দুদক কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়। আমি নিজে এক সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। দুদকের হাতে আসামিকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের কাছে যখনই সংবাদ এসেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য এজেন্সি যেন আসামিকে বা অভিযুক্তকে দেশ থেকে বের হতে না দেয়। এ রকম বেশ কয়েকজন এখনও আমাদের হিসাবের মধ্যে আছেন।
দুদক আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদক নিজে পুলিশি প্রতিষ্ঠান না, দুদককে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হয়। এখন আমরা অনেকেই জানি বড় বড় আসামিদের কে কে দেশে আছে, কে কে দেশে নেই। এটা আমাদের অজ্ঞাত না। যারা দেশে নেই, তাদেরকে একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফিরিয়ে আনা, যেটা কঠিন প্রক্রিয়া, সেটা আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে। যারা দেশে আছেন, তাদের প্রতি আমরা কতটা সদয় কিংবা কতটা নির্দয়, কতটা অবজেকটিভ, সেটি আপনারা বিবেচনা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব, তাদের ধরার চেষ্টা করছি।
দুদক আগের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখন রুলিং পার্টি কারা? আমরা কাজ শুরু করি ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত দুদক থেকে ছাড়া পেয়েছে এমন একটা নামও বলতে পারবেন না। আদালত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আদালত তো আমার বিষয় না। দুদক দল নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কোনও বিশেষ দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করিনি।