বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে গতকাল শুক্রবার সারাদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর। বিমান বন্দর সংলগ্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় সাময়িক এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ওই কেন্দ্র থেকেই বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো।
হিথ্রো কর্তৃপক্ষ বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, যাত্রী এবং আমাদের কর্মীদের সুরক্ষায় হিথ্রো ২১ মার্চ ২৩.৫৯ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। যাত্রীদেরকে বিমানবন্দরে না আসতে এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে তাদের সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
পশ্চিম লন্ডনের হেইয়েসে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে অগ্নিকাণ্ডের কারণে শুধু হিথ্রোই নয়, কয়েক হাজার বাড়িও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর কেন্দ্রটির আশপাশ থেকে অন্তত ১৫০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড বলছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের দিকে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আগুন লাগার পর তারা অন্তত ২০০ ফোন কলে পেয়েছে। রাত প্রোয় সাড়ে ১১টার দিকে জরুরি বিভাগকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে তালগোল : ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ততম হিথ্রো বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সূচি ওলোটপালট হয়ে গেছে। গতকাল সারা দিন যে ফ্লাইটগুলো হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল, তার অনেকগুলো যাত্রার মাঝপথ থেকে ফিরে গেছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলো পুনরায় যাত্রা করতে হিথ্রোর পরস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত এই বিমানবন্দরে গতকাল শুক্রবার ১ হাজার ৩৫১টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল, যেগুলো ২ লাখ ৯১ হাজার যাত্রী পরিবহন করত। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ফ্লাইটগুলোকে ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ফ্লাইট আগের বিমানবন্দরে ফিরে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে হিথ্রো বিমানবন্দরে এদিন নামার কথা ছিল ৭৭টি এয়ারলাইন্সের ৬৬৯টি ফ্লাইট। তার মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারয়েজের ৩৪১টি, ভার্জিন আটলান্টিকের ৩১টি, লুফথানাসার ২১টি, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ২০টি ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১৭টিসহ ফ্লাইট রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটও এদিন হিথ্রো বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রার মাঝপথ থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দর কীভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এখন সেই প্রশ্ন উঠছে।
রয়টার্স লিখেছে, হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে উড়োজাহাজ শিল্প। এক দিনের বন্ধের কারণে কোটি কোটি পাউন্ড ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর এই ক্ষতি কে পোষাবে, তা নিয়েও ঝামেলা বাধতে পারে।
হিথ্রো বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যের সব থেকে বড় এই বিমানবন্দর গত এক মাসে ব্যবহার করেছেন ৪০ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪ যাত্রী। সেন্ট্রাল লন্ডনের পশ্চিমে অবস্থিত এ বিমানবন্দর দিয়ে ৮০টির বেশি দেশের দুই শতাধিক গন্তব্যে ছোটে মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পরপরই (১৯৪৬ সালে) বিমানবন্দরটি চালু হয়। বর্তমানে দুটি রানওয়ে ও চারটি টার্মিনাল রয়েছে সেখানে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যাকআপ জেনারেটর থাকলেও সেগুলোর গোটা বিমানবন্দর চালানোর সক্ষমতা নেই। বিমানবন্দরের আশেপাশের হোটেলগুলো যাত্রীতে ভরে গেছে। তারা হিথ্রোর খবরের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইউরোপিয়ান এয়ারলাইন্সগুলো বড় পরিসরে সবশেষ বিড়ম্বনায় পড়েছিল ২০১০ সালে। সেসময় আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ধোয়া আর ছাইয়ে আকাশ ঢেকে যাওয়ায় উড়োজাহাজ পরিষেবা ব্যাহত হয়।