যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা চালু করেছে এবং গোয়েন্দা তথ্য প্রদান শুরু করতে রাজি হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ওয়াশিংটনের প্রস্তাব সমর্থন করতে ইউক্রেন প্রস্তুত বলে জানানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ফের তাদেরকে সামরিক সহায়তা করতে উদ্যোগী হল। গত মঙ্গলবার দুই দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানায়। ওদিকে, পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লো সিকরস্কি গতকাল বুধবার নিশ্চিত করে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ইউক্রেইনে অস্ত্র সরবরাহ শুরু হয়েছে।
সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেন বৈঠকে মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে কিইভ। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনকে আবার প্রয়োজনীয় সহায়তা চালু করতে রাজি হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র এক সপ্তাহ আগের অবস্থান থেকে সরে অনেকটাই এসেছে। ওই সময় হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডার বৈঠকের জেরে দেশটিতে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করেন ট্রাম্প। তাছাড়া, জেলেনস্কিকে শান্তি আলোচনায় বসানোর জন্য চাপ জারি রাখার চেষ্টাতেও এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। খবর বিডিনিউজের। সৌদি আরবের জেদ্দায় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাশিয়াকে দেবে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মস্কোর হাতে। আমাদের আশা, রাশিয়া দ্রুত হ্যাঁ বলবে, যাতে আমরা আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে যেতে পারি, সাংবাদিকদের বলেন রুবিও। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এই যুদ্ধ চলতে থাকলে মানুষ মারা যাচ্ছে, বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে, আহত হচ্ছে, উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হচ্ছে।
তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান চালায় এবং বর্তমানে দেশটি ইউক্রেনের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে। রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা অনিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি শান্তি আলোচনায় আগ্রহী, তবে তার সরকার বারবার যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো চুক্তি করতে চায়। তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনকে রাশিয়া–অধিকৃত চারটি অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণরুপে সরে যেতে হবে। এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যিনি সৌদি আরবে থাকলেও আলোচনায় অংশ নেননি, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে নির্ভরযোগ্য শান্তি ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার সব দিক প্রস্তুত করতে পারব। রুবিও জানান, এই পরিকল্পনা রাশিয়ার কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ তার রুশ সমকক্ষের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করবেন, এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহেই মস্কো সফর করে পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি জেলেনস্কিকে আবার হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় পুনরায় শুরু হয়েছে। এটি একটি বড় পরিবর্তন নির্দেশ করে, কারণ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করা এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে, নতুন চুক্তির ফলে মঙ্গলবার রাত থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা জানান, তিনি জেদ্দার বৈঠকের পর ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এদিকে, নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে উপস্থিত থাকবেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টাস্ক বলেছেন, আমেরিকা ও ইউক্রেন শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইউরোপ একটি ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।
যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন বর্তমানে চাপে রয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে, যেখানে মস্কোর বাহিনী কিইভের সেনাদের বিতাড়িত করতে নতুন অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনও পাল্টা আঘাত হানছে। মঙ্গলবার কিইভ ৩৩৭টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা মস্কো ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।