চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায়। এটি সড়ক দুর্ঘটনার হট স্পট হিসেবে পরিচিত। ওইস্থানে সড়কের দুইপাশে ঘন বনাঞ্চল, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, বেপরোয়া গতি, লবণ পানিতে পিচ্ছিল সড়ক ও ঢালু হওয়ার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। চলতি সনের প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত ৩ মার্চ পৃথক ৩টি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেছে আলু বোঝাই একটি ট্রাক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেছে লবণ বোঝাই ট্রাক। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ওভারটেক করতে গিয়ে প্রাইভেট কারের পেছনে বাসের ধাক্কা ও একই বাসের ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একইস্থানে পর পর তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রয়েছে মাইক্রোবাসের সাথে ম্যাজিক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ, আরেকটি মাইক্রোবাসকে যাত্রীবাহী বাসের পেছনে ধাক্কা ও আরেকটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ। গত ৩১ জানুয়ারি ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ৬ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বিলে পড়ে উল্টে যায় কাভার্ডভ্যান। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, গাড়ির এলইডি হেডলাইটের আলো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কে দুই পাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকাটি প্রায় এক কিলোমিটার বিস্তৃত। সড়ক উভয় পাশে অসংখ্য স্থানে দেখা গেছে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির ভাঙা গ্লাসের টুকরো। জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়কের দুই স্থানে ঢালুর অংশে রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। সড়ক দুই পাশেই রয়েছে বনাঞ্চল। যার ফলে সড়কের ওই স্থানে সূর্যের আলো খুবই কম পড়ে। এতে লবণবাহী থেকে নিঃসৃত পানির কারণে ওই স্থানে সড়ক সবসময় পিচ্ছিল থাকে। বিশেষ করে দূর–দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এছাড়া দুর্ঘটনাপ্রবণ জাঙ্গালিয়া এলাকায় দেখা যায়নি কোনো সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকা দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কারণে মধ্যে মহাসড়ক চার লেন বা ছয় লেনে এখনো উন্নীত না হওয়া, বিপজ্জনক অসংখ্য বাঁক, লবণের পানির কারণে সড়কের পিচ্ছিলতা, মূল সড়কের সাথে দুই পাশের দূরত্ব বৃদ্ধি, বেপরোয়া গতি ও চালকের অদক্ষতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বাঁকের আগে–পরে গতিরোধক না থাকা, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, বেপরোয়া গতি, লবণ পানি, রোড সাইন না থাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চালকদের এই সড়ক সম্পর্কে ধারণা না থাকা ইত্যাদি কারণে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে জাঙ্গালিয়া এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। হাইওয়ে থানার উদ্যোগে প্রতি মাসে চালক ও সহকারীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন চলমান আছে।