বসন্তের সকাল। ফাগুনের বাতাস বইছে সাজেকের রুইলুই পাড়ায়। আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্নও। রুইলুই থেকে কংলাক পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ফুটেছে মান্দার ফুল। সকালের আলোর ফোটার সাথে সাথে এসব মান্দার গাছের ফুলের মধু পান করতে আসে কয়েক রকমের পাখি। চন্দনা টিয়া, সোনা কপাল হরবোলা, কালো ঝুঁটি বুলবুলসহ বিভিন্ন পাখির বিচরণ চোখে পরে। সাজেকে অক্ষত বনের এখনো ঠিকে আছে কিছু দুর্লভ পাখি। তাদের মধ্যে অন্যতম পাহাড়ি ময়না বা হিল ময়না। রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রের রুনময় রির্সোটের পাশের লাগায়ো উুঁচ বৃক্ষে দল বেঁধে আসে পাহাড়ি ময়নার ঝাঁক। রির্সোটের পাশে এক মরা গাছে এক সাথে বসে আছে অন্তত ৭টি ময়না। এমন দৃশ্য বেশ বিরল। কয়েকটা ছবি তুলতেই উড়াল দিল ময়নার ঝাঁক ।
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে বিপন্ন হয়ে উঠছে হিল ময়না বা পাহাড়ি ময়না। শিকার, পাচার ও আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় হিল ময়না বর্তমানে দুর্লভ শ্রেণীতে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। দ্রুত পোষ মানা ও মানুষের আদলে কথা বলতে পারার কারণে শৌখিন পাখি পালকদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। ফলে বাড়ছে শিকারও।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, হিল ময়না আমাদের দেশের দুর্লভ পাহাড়ি অঞ্চলের পাখি। গত বছরের ১৯ জুন অভিযান চালিয়ে বন বিভাগ পাচারের সময় ৬টি হিল ময়না উদ্ধার করে। পরে তা বনে অবমুক্ত করা হয়। মূলত বন্যপ্রাণী ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী কোন সংরক্ষিত বা পরিযায়ী পাখি হত্যা ও শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ। ময়না এবং টিয়া আইনে শিডিউলভুক্ত রক্ষিত প্রাণী। কেউ যদি এ ময়না শিকার করে তাহলে এক বছরের জেল ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কেউ যদি পুনরায় একই অপরাধ করে তাহলে দুই বছরের জেল এবং ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হতে পারে। তিনি আরো জানান, খাগড়াছড়ি বন বিভাগ হিল ময়না পাচার ও শিকার রোধে তৎপর রয়েছে। আমাদের কাছে খবর আসলেই আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিই।’ খাগড়াছড়ির বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, ‘হিল বা পাহাড়ি ময়না দ্রুত পোষ মানে এবং মানুষের অনুকরণে কথাও বলতে পারে। সে কারণে এর চাহিদাও বেশি থাকে। শৌখিন পাখি প্রেমিকদের কারণে হিল ময়না বিপন্ন। প্রতি জোড়া ময়না বয়স ভেদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ’
তিনি আরো বলেন, ‘ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম গ্রাক্যুলা রিলিজিওসা। রিলিজিওসা শব্দের অর্থ সুন্দরের দ্যোতক। ময়নার গায়ের পালক উজ্জ্বল কালো। ময়নার পা ধবধবে হলুদ। এরা সাধারনত বৃক্ষের উঁচু উঁচু ডালে থাকতে পছন্দ করে। লম্বায় দশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। বাংলাদেশ ,নেপালসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এদের দেখা মিলে। বাংলাদেশের ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী আইনেও এ প্রজাতি সংরক্ষিত।’ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচিটির সংগঠক সাথোয়াই মার্মা বলেন ,‘ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মহালছড়ি.লক্ষীছড়ি, পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি অরণ্যে হিল ময়না শিকারের তৎপরতা বেশি। প্রতি জোড়া ময়না স্থানীয়ভাবে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এসব ময়না খাগড়াছড়ির বাইরেও যায়। বিশেষত ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশি পাঠানো হয়। তবে এখন গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে পাখির সংখ্যাও কমে গেছে।’