খলিফাপট্টিতে দিন-রাত সেলাই মেশিনের শব্দ

দর্জিরা ব্যস্ত, তৈরি হয় সুলভ মূল্যে বাহারি ডিজাইনের পোশাক

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৪ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর দর্জিপাড়া খ্যাত খলিফাপট্টিতে দর্জি শ্রমিকদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। নগরীর সিরাজদৌল্লা রোডের সাব এরিয়া বাজার সংলগ্ন খলিফাপট্টিতে বর্তমানে দিনরাত সেলাই মেশিনের খটখট শব্দের সাথে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে দর্জিদের ব্যস্ততা শুরু হয়। খলিফাপট্টির দর্জিরা শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে নগরী এবং এর বাইরের বিভিন্ন মার্কেটে পাইকারীতে বিক্রি করেন। এছাড়া অগ্রিম অর্ডার নিয়ে খলিফাপট্টির দর্জিরা কাজ করেন বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকদের কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করার কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইচ সংযুক্ত করছেন। আশরাফুল আলম নামের একজন দর্জি জানান, এই সময়ে অনেকে জামা অর্ডার করছেন। তাই তাই কাজের চাপও একটু বেশি।

খলিফাপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখানে সারা বছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদকেন্দ্রিক।

খলিফাপট্টির কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জামাও তৈরি হচ্ছে। দেশি ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, স্কার্ট ও প্যান্ট তৈরি করে থাকেন খলিফাপট্টির ডিজাইন মাস্টাররা।

সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, খলিফাপট্টিতে পোশাকের চাহিদা এখন চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দর্জিরা সারারা, গারারা, নায়রা ও লেহেঙ্গা তৈরিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।

খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, খলিফাপট্টিতে এখন রাতদিন দর্জি শ্রমিকদের ব্যস্ততা চলছে। আমাদের এখানে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ছাড়াও কঙবাজার ও নোয়াখালীকুমিল্লা এবং ফেনী থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্রেতা আসেন। এখানে অগ্রিম অর্ডার নিয়েও কাজ করা হয়। আমাদের দর্জিরা সুলভ মূল্যে বাহারি ডিজাইনের জামা তৈরি করেন। বাজারে ভারতীয় পোশাকের আগ্রাসনের মধ্যে আমাদের প্রতিযোগিতা করে টিকতে হচ্ছে। তবে আমাদের কাপড়ের গুণগত মানও অনেক ভালো।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজের গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে প্রায় আড়াইশ’ কারখানা রয়েছে। পুরনো বেশ কয়েকটি ভবনজুড়ে রয়েছে কারখানাগুলো। প্রায় সবগুলো কারখানার শ্রমিক হচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপে চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু; তদন্তের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধচ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাসের রায় বহাল