বোমার হুমকির মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রোম থেকে আসা একটি ফ্লাইট নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করেছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি অবতরণের পর ২৫০ জন যাত্রী এবং ১৩ জন ক্রুকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, বিমানের রোম ফ্লাইটে বোমা আছে বলে অচেনা নম্বর থেকে আমরা একটা হুমকি পাই। এরপর আমরা যথাযথ প্রটোকল অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিই। বিমানের উড়োজাহাজটি সকাল ৯টা ২০ মিনিটে নিরাপদে ল্যান্ড করেছে। যাত্রী ও ক্রুরা সবাই ভালোভাবেই টার্মিনালে নেমেছেন। আমরা প্রটোকল ফলো করছি, যদি কোনো হুমকি থেকেই থাকে। খবর বিডিনিউজের।
বার্তা আসে পাকিস্তানি নম্বর থেকে : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইট নিয়ে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছিল, সেই উড়োজাহাজে বিস্ফোরক থাকার বার্তা পাকিস্তানি একটি নম্বর থেকে দেওয়া হয় বলে পুলিশের ভাষ্য। ফেসবুক পোস্টে ডিএমপি বলেছে, বুধবার ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটে এয়ারপোর্ট এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে একটি পাকিস্তানি নম্বর থেকে ‘বোম্ব থ্রেট’র বার্তা আসে। ওই বার্তায় দাবি করা হয়, রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি–৫৩৬ ফ্লাইটে উচ্চমাত্রার ৩৪ কেজি বিস্ফোরক রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, যে ফ্লাইট নিয়ে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছিল, সেই উড়োজাহাজ, যাত্রী ও লাগেজ তল্লাশি করে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বস্তু মেলেনি। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার এই তল্লাশি শেষে দুপুরে যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিজেদের গন্তব্যে চলে যান।
বিমান বাংলাদেশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা কার্যপ্রণালী অনুযায়ী, উড়োজাহাজটি ঢাকায় অবতরণের পরপরই বিমানবন্দরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে ফ্লাইটটিকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নেওয়া হয়। যাত্রীদেরকে নিরাপদে নামানো হয় এবং সব যাত্রী ও ব্যাগেজসহ উড়োজাহাজটি তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তা তল্লাশিতে কোনো কিছু না পাওয়ায় ‘সিকিউরিটি থ্রেট ক্লিয়ার’ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে দুপুর দেড়টার মধ্যে সব যাত্রী নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, খবর পাওয়া মাত্রই সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ক্যানাইন ইউনিট যৌথ বাহিনীর সঙ্গে তল্লাশি অভিযানে যোগ দেয়।
সন্দেহভাজন লাগেজের ছবিও দেয় তথ্যদাতা : বোমা হুমকি নিয়ে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের এপিবিএন কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসারের সরকারি নম্বরে উড়োজাহাজে বোমা থাকার বার্তাটি আসে। পরবর্তীতে সেই নম্বরে তথ্যদাতার সঙ্গে কিছু চ্যাট হয়। তবে তিনি (বার্তাদাতা) ভয়েস কল রিসিভ করেননি। ওই ব্যক্তি কি হুমকিদাতা না তথ্যদাতা, এ প্রশ্নের উত্তরে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, তিনি তো হুমকি দেননি, তথ্য দিয়েছেন। তবে যে কেউ বাংলাদেশে বসেও পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্যবহার করতে পারেন। ওই তথ্যদাতা একটি লাগেজের ছবিও পাঠিয়েছেন, যে ধরনের লাগেজে বোমাটি থাকতে পারে বলে তার ভাষ্য।
তিনি বলেন, দুটো সন্দেহভাজন লাগেজকে আলাদা করা হয়, সেগুলো খুলে পরীক্ষা করেও কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর এয়ারক্রাফটের কার্গো থেকে প্যালেটগুলো নামিয়ে একটা একটা করে তল্লাশি চালানো হয়।
ভুয়া তথ্যদাতা শনাক্ত হলে ব্যবস্থা : উড়োজাহাজে নিরাপত্তা হুমকি ‘মিথ্যা সংবাদের ভিত্তিতে হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, এটা একটা মিথ্যা সংবাদ। কোনো কিছু তো হয়নি। মিথ্যা সংবাদের ভিত্তিতে হয়েছে; (সংবাদদাতাদের) শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শনাক্ত করা গেলেই আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও কৃষি তথ্য সার্ভিস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন উপদেষ্টা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, আমাদের রোম ফ্লাইটে থ্রেট একটা ছিল। আমরা সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। বাট ফ্লাইটটা ৯টা ২০ মিনিটে সুন্দরভাবে ল্যান্ড করেছে। যাত্রী ও ক্রুরা সবাই নিরাপদেই আছেন। এখন মনে হচ্ছে ওটা ছিল একটা উড়োখবর।