সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ কাউন্সিলের মাধ্যমে, অধ্যাদেশ জারি

| বুধবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

সুপ্রিম কোর্টে স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিষয়টি সরকারের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হল। ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ শীর্ষক এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই ও সুপারিশ করার জন্য একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকবে, যার নাম হবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। প্রধান বিচারপতি হবেন সাত সদস্যের এই কাউন্সিলের চেয়ারপারসন। খবর বিডিনিউজের।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাতে চাই এ আইনটা হয়েছে। এ আইন তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন থেকে আলাদা খসড়া পাঠানো হয়েছিল বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এ ধরনের একটা অধ্যাদেশ তৈরি করার প্রক্রিয়া ছিল, সেই অধ্যাদেশের কপি সবকিছু পর্যালোচনা করেছি আমরা। আমরা যারা কনসার্ন নাগরিক সমাজ আছেন, যারা স্টেক হোল্ডার আছেন তাদের সাথে, আপনারাও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আমরা একটা বড় ধরনের সভা করেছি। এরপরও আমরা ইনডিভিজুয়ালি বিভিন্ন এঙপার্টের কাছে পাঠিয়েছি, তার মধ্যে সাবেক বিচারপতি আছেন, আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, আইনের অধ্যাপক আছেন, আইনের বিশেষজ্ঞ আছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, যতটা পারা যায় একটা ভালো আইন করার জন্য। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই কাউন্সিলে আপিল বিভাগে কর্মরত প্রবীণতম বিচারক, হাই কোর্ট বিভাগে কর্মরত প্রবীণতম বিচারক, বিচারকর্ম বিভাগ থেকে নিযুক্ত হাই কোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক, চেয়ারপারসনের মনোনীত আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং চেয়ারপারসনের মনোনীত একজন আইনের অধ্যাপক বা আইন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এই কাউন্সিলের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করার জন্য রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে প্রধান বিচারপতি এই কাউন্সিলের সভা ডাকবেন। সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, কাউন্সিল প্রথমে যাচাইবাছাই করবে। উনারা নিজ উদ্যোগে নাম সংগ্রহ করবেন, একই সাথে যে কোনো মানুষ যে কোনো আইনজীবী যেন অ্যাপ্লাই করতে পারেন, নিজের ইচ্ছায় যেন অ্যাপ্লাই করতে পারেন।

কারো নাম রেফার করে, যেমন আপনি ভালো আইনজীবী, আপনি মনে করলেন উনাকে জাজ করলে ভালো হয়, উনার নাম আপনি নিজে রেফার করে আপনি চিঠি পাঠাতে পারেন, সেটা উন্মুক্ত আছে। আবার একই সাথে এ কাউন্সিল স্বঃউদ্যোগেও ভালো ভালো নাম সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে, যাতে ভালো জাজ নিয়োগ দেওয়া যায়। কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাইবাছাই করার পর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, স্বচ্ছ এবং একটা জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকরা নিয়োগ হবেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে চরম অনাচার হত, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হত, মানুষকে যে দমন নিপীড়ন করা হত, তার একটা বড় প্ল্যাটফরম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও মানুষ প্রতিকার পেত না, এবং এটার কারণ ছিল উচ্চ আদালতে রাজনৈতিক সরকারগুলো সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায়, অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য লোকদেরকে জাজ হিসেবে নিয়োগ দিত।

উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে যদি নিরপেক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ না পায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি বা ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যায়, ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। দক্ষ, অভিজ্ঞ, দলনিরপেক্ষ এবং প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাবে। এ সমাজে বহু বছর ধরে বহু দল থেকে, হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন থেকে, নাগরিক সংগঠন থেকে এ ধরনের দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাই কোর্টে পরবর্তী যে নিয়োগ আছে, সেখানে এই কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০০ আসন পেলেও বিএনপি জাতীয় সরকার করবে : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধপানি সরবরাহের ব্যাপারে সিডিএ-ওয়াসা ঐকমত্য