মোজাম্বিকে সংঘাতে দোকানপাট লুট, সরকারের সহায়তা চাইলেন বাংলাদেশিরা

| বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের দেশ মোজাম্বিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে সহিংসতায় দেশটিতে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিদেশিদের দোকানপাট আক্রান্ত হচ্ছে। বেশ কিছু বাংলাদেশির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও লুটও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। চলমান নৈরাজ্যের কারণে সেখানে ব্যবসাসহ বিভিন্ন কারণে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগউৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জানমাল রক্ষায় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সাহায্য চেয়েছেন। মোজাম্বিকে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও দেশটিতে সংঘাত ও লুটপাটের খবর এসেছে। খবর বাংলানিউজের।

মোজাম্বিকের মেকানহেলা শহরে ব্যবসা করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রেদোয়ানুর রহমান। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মমতাজ কমার্সিয়াল। তিনি বলেন, এখানে প্রায় পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় আছে ফ্রেলিমো নামে একটি দল। গত ৯ অক্টোবর এখানে নির্বাচন হয়। এতে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। কিন্তু সরকারপক্ষ সেটা নাকচ করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মোজাম্বিকের শীর্ষ আদালত ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলের ড্যানিয়েল চ্যাপোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করে। তখন এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী প্রার্থী ভেনানসিও মন্ডলানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশপ্রশাসনের বড় অংশও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এক হয়ে যায়। এরই সুযোগে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে।

মোহাম্মদ রেদোয়ানুর রহমান বলেন, রাজধানী মাপুতোয় বিক্ষোভ ব্যাপক আকারে নিয়েছে। সেখানে এবং তার আশপাশে লুটতরাজও চলছে নির্বিচারে। লুটপাট ঠেকাতে আইনশৃক্সখলা বাহিনী বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতাই চোখে পড়ছে না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরপূর্ব সীমান্ত লাগোয়া দেশ মোজাম্বিকে কতজন বাংলাদেশি থাকেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সেখানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসও নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ মিশন থেকে সেখানে যোগাযোগ রাখা হয়।

২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে তখন বৈধভাবে তিন হাজার ৩৪৯ জন ভারতীয় ও এক হাজার ২৫৯ জন পাকিস্তানি ছিলেন। রেদোয়ানুর রহমানের মতে, প্রচুর বাংলাদেশিও দেশটিতে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে মোজাম্বিক অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দোকানপাট লুটপাটের ভিডিও শেয়ার করতে দেখা গেছে।

রেদোয়ানুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ফলাফলকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছি। আমরা এখানে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছি (সংখ্যা যাচাইকৃত নয়)। দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা এখানে আছেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিদেশিদের দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও মিলকারখানায় হামলা চালিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা সব লুটপাট করেছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকে পথে বসে গেছে। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। কেউ কেউ সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। যেন মৃত্যুর সামনে বসে আছি। জানি না এখন কী হয়। যেহেতু এখানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাহায্য চাই আমরা।

মোজাম্বিকে থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দীন বলেন, এখানে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। একটা প্রদেশে ৯০ শতাংশের বেশি দোকানপাট লুটপাটের শিকার হয়েছে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে সাহায্য চাই। ছাত্র সমন্বয়কসহ সবাই যেন উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা বলছে : গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) বিএম জামাল হোসেন বলেন, মোজাম্বিকে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ মিশন থেকে সেখানের বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশিদের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানদোকানপাট ভাঙচুরও লুটপাট হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় চোর ধরে পুলিশে দিল জনতা
পরবর্তী নিবন্ধদেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে ম্যাক্সিমা-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ৪