দুই যুগ পর নতুন ভবন পাচ্ছে মহসিন কলেজ

বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় হচ্ছে ৬ তলা বিজ্ঞান ভবন

ইমাম ইমু | শনিবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। চট্টগ্রাম কলেজের বিপরীত পাশে এটি অবস্থিত। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন ভবন বরাদ্দ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে প্রায় দুই যুগ পর নতুন ছয় তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে এ ভবন। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হবে একাডেমিক ভবনটি। গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য ভবনে থাকবে পাঁচটি ল্যাব। ১৮০ জনের একটি কনফারেন্স কক্ষ হবে। এছাড়া প্রতিটি তলায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের জন্য কক্ষ থাকবে। গত মাসে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সর্বশেষ ২০০১ সালের দিকে পুরনো ভবনের বর্ধিতাংশ করা হয়েছে কলেজটিতে। এর পরে আর নতুন করে কলেজটিতে কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ভবনের মাধ্যমে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। শ্রেণিকক্ষ সংকট ঘুচবে অনেকটা বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ১৮৭৪ সালে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের মহসিন ফান্ডের অর্থায়নে চট্টগ্রাম সরকারি মাদ্রাসা হিসেবে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসাকে ‘চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’ নামকরণ করে এর কার্যক্রম উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করা হয় এবং পরে ১৯৭৯ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজকে একত্রিত করে ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ’ নামে নামকরণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কলেজটি হতে সম্পূর্ণরূপে আলাদা হয়ে যায় এবং কলেজের উত্তর দিকে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৭৯৮০ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রি (পাস) কোর্স, ৯৬৯৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) কোর্স, ৯৩৯৪ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স প্রথম পর্ব এবং ৯৬৯৭ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স শেষ পর্ব প্রবর্তন করা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং ডিগ্রি, বিবিএস (পাস), বিএসসি (পাস) এর অধীনে প্রায় ১৬টি বিষয় এতে পড়ানো হয়। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার। এসব শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষ দরকার অন্তত ৬৪টি। এর মধ্যে কলেজে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ৩৬টি। শিক্ষক রয়েছে ৭৬ জন। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীর তুলনায় পর্যাপ্ত ভবন নেই প্রতিষ্ঠানটিতে। রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ব্যবসায় শিক্ষা ভবন এবং মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামের জন্য চাহিদা দিলেও সেটির জন্য কোনো ভবন বরাদ্দ হয়নি। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটিতে অডিটোরিয়াম না থাকায় কর্তৃপক্ষকে বড় কোনো সেমিনার বা কর্মশালা আয়োজন করতে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। আন্তর্জাতিক মানের কোনো আয়োজনও করা যায় না অডিটোরিয়ামের জন্য।

এই ব্যাপারে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, অনেকদিন আমাদের কলেজে নতুন ভবন হচ্ছে না। এখন বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণের আওতায় একটি ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। এ ভবনে পাঁচটি ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক কক্ষ এবং কনফারেন্স কক্ষ হবে। তিনি বলেন, আমাদের আগে থেকেই শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। অন্তত ৬৪টি শ্রেণিকক্ষের জায়গায় আমাদের আছে মাত্র ৩৬টি। আগে পরে করে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে হয়। আমরা একটি ব্যবসায় শিক্ষা এবং মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামের জন্য চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু সেগুলো বরাদ্দ এখনো দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের এত বড় কলেজ কিন্তু একটি অডিটোরিয়াম নেই, যার কারণে আমরা বার্ষিক অনেক প্রোগ্রাম সুন্দরভাবে করতে পারি না। কোনোমতে দুইটা শ্রেণিকক্ষ একসাথ করে আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং সেমিনার করে থাকি কিন্তু সেটা মাননসই হয় না। একটি অডিটোরিয়াম এবং একটি একাডেমিক ভবন হলে আমাদের আর শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকবে না, প্রোগ্রামা করতেও সমস্যা হবে না।

এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী বাবুল আহমেদ আজাদীকে বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। আমাদের টার্গেট রয়েছে আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাকেরের ঝড়, রিশাদের ঘূর্ণি হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
পরবর্তী নিবন্ধচালের দাম লাগামহীন