সনদ সংগ্রহে এনালগ থেকে আধুনিক মাধ্যমে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সনদ সংগ্রহ ও সংশোধনের প্রক্রিয়া সহজ করতে ‘ই–মেইলিং সার্টিফিকেশন সার্ভিস’ চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সার্ভিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোনোপ্রকার ভোগান্তি ছাড়াই যেকোনো জায়গায় বসেই সনদের জন্য আবেদন, সংশোধন এবং সনদ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষ হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ৩ দিনে জরুরি সনদ আর ৭ দিনে নিয়মিত সনদ তুলতে পারবেন। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ই–মেইলিং সার্টিফিকেশন সেবার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এসময় চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা যদি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভিত্তি ঠিক করতে পারি, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব কিছুর আমূল পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট উঠানো বা অন্যান্য অফিসিয়াল একাডেমিক কাজ এনালগ পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। ডিজিটাল এ যুগে আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা এনালগ পদ্ধতিতে কাজ করতে অনেক ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এ কষ্টের কথা বিবেচনা করে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর অনলাইনে ফি জমা দেয়াসহ নানা ধরনের ডিজিটাল সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের বিভিন্ন শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তার পূর্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, বিদেশে সার্টিফিকেট বা অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম বহুকাল থেকেই সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শেষ করে সার্টিফিকেট বা অন্যান্য কার্যক্রমে কোনো ধরনের হয়রানি বা ঝামেলা পোহাতে হয় না।
এ সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, আমরা ই–মেইলিং সার্টিফিকেশন সার্ভিসেস নামে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সেবা চালু করেছি। এ সার্ভিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সার্টিফিকেটের জন্য জমাকৃত আবেদনের আপডেট জানতে পারবেন। একজন শিক্ষার্থী সনদের জন্য আবেদন করলে সেটি আমাদের কম্পিউটারে আসবে এবং তাকে ই–মেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে, তার আবেদন সাবমিট হয়েছে। আমরা আবেদনটি যাচাই–বাছাই করে যদি দেখি সবকিছু ঠিক আছে, তবে তাকে জানানো হবে যে, তার আবেদন সফলভাবে সাবমিট হয়েছে। আবেদনে কোনো সমস্যা থাকলে আবেদনকারীকে সুনির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে কোথায় ভুল আছে। পরে তা সংশোধন করা হলে শিক্ষার্থীদের সনদ নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি ছাড়াই সনদ নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সনদ লেখক মাত্র দুইজন। যদি আরও একজন লেখক নিয়োগ দেওয়া যায় তবে কাজগুলো আরও সুন্দর হবে। এখনও আমাদের পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। আশা করি আগামী জানুয়ারি থেকে আমরা পুরোপুরি সফলভাবে এ সেবা চালু করতে পারবো। এ সেবায় শিক্ষার্থীরা ৩ দিনের মধ্যে জরুরিভাবে সনদ তুলে নিতে পারবে। তাছাড়া নিয়মিতভাবে সনদ তুলে নিতে তাদের মাত্র ৭ দিন সময় লাগবে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, শিক্ষার্থীরা সনদের জন্য ১ মাস আগে আবেদন করে মনে করতো তাদের সনদ প্রস্তুত হয়ে গেছে। অনেক দূর থেকে এসে যখন দেখতো সেটা প্রস্তুত হয়নি, তখন কান্নাকাটি করতো। দূর–দূরান্ত থেকে এসে ভোগান্তির শিকার হতো। এখন সেটা আর হবে না। একজন শিক্ষার্থী ই–মেইলের মাধ্যমে জানতে পারবে তাকে কোন তারিখে এসে সনদ তুলে নিতে হবে বা তার সনদ প্রস্তুত হয়েছে কিনা।
এ উদ্যোগের পর শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চবির অন্যতম সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অটোমেশন সিস্টেম চালুর আবেদন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেনের জন্য অনলাইন ব্যাংকিং চালুর পর এখন সনদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অটোমেশন ই–মেইল সিস্টেম চালু করেছে। যা সনদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে আসবে। এরকম আরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।