মশক নিধনে এবার রিসার্চ প্রোডাক্টের ওপর গুরুত্বারোপ

চকবাজারে পরিচ্ছন্নতা অভিযান উদ্বোধনে মেয়র, মেয়র ও কাউন্সিলররা মিলে যে দুর্নীতি করেছে তার শ্বেতপত্র বের হওয়া উচিত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মশক নিধনে দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহার করলে তাতে কার্যকর সুফল মিলে না। তাই নগরে মশক নিধনে এবার ‘রিসার্চ প্রোডাক্ট’ এর উপর জোর দিচ্ছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, একই কীটনাশক বার বার স্প্রে করলে সেটায় মশা এডাপ্টেড হয়ে যাবে এবং রেজিসটেন্স ডেভেলাপ করবে। এতে মশা মারা যাবে না। তাই তিনচার বছর পর নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে, তখন রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

এ সময় ‘মাসকুবান এন্ড সলিউশান’ নামে একটি রিসার্চ প্রোডাক্ট পাওয়া গেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এডিস মশার লার্ভাসহ অন্যান্য লার্ভা ধ্বংস করার জন্য এটা আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দিচ্ছি। আমি আরও রিসার্চ প্রোডাক্ট বিশ্বে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশে খোঁজ নিচ্ছি। আরেকটি রিসার্চ প্রোডাক্ট আমরা পেয়েছি। সেটিও আনতে বলেছি। দুটোর গুণগত মান আমরা দেখবো কোনটায় মশা বেশি মারা যাচ্ছে। এছাড়া ইতোপূর্বে যেসব কীটনাশক কেনা হয়েছে তার কার্যকারিতা দেখছেন জানিয়ে বলেন, কার্যকারিতা কম হলে কেনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মেয়র।

এসময় মেয়র আওয়ামী সমর্থিত চসিকের সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলররা বিভিন্ন দুর্নীতি করেছেন দাবি করে বলেন, আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে আমি যাচ্ছি। প্রতিটা ওয়ার্ডে যাওয়ার পরে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির চিত্র আমি দেখতে পাচ্ছি। কাউন্সিলররা এবং মেয়র মিলে যে দুর্নীতি করেছে তার শ্বেতপত্র বের হওয়া উচিত এবং জনগণের সেটা জানা উচিৎ। এবং জনগণই বিচার করবে দুর্নীতির জন্য তাদের কি শাস্তি পাওয়া উচিত।

শাহাদাত বলেন, শুলকবহর ওয়ার্ডের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে দেখলাম দোকান থেকে অলরেডি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে এবং সেখানে সিটি কর্পোরেশন এক বছরে পেত মাত্র এক লাখ টাকা। অথচ সেখানে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা প্রতিবছর আয় করার কথা ছিল। কাজেই এই যে একটা দুর্নীতি মেয়র এবং কাউন্সিলররা মিলে করেছে, আমি একে একে সব দেখতে পাচ্ছি। ড. শাহাদাত বলেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার জন্য আসিনি। আমি রাস্তায় কাজ করার জন্য এবং জনগণের পাশে থাকার জন্য এসেছি। আমি পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মচারীদের বলছি আমি নগরপিতা নই, নগরসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়। পরিস্কারপরিচ্ছন্নতার ওপর আমি বেশি জোর দিচ্ছি। চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি এবং হেলদি সিটি করতে চাই আমি।

তিনি বলেন, গত সরকারের আমলে প্রতিটি কাউন্সিলর প্রতিটি ওয়ার্ডে একেক ওয়ার্ড থেকে ৬০, ৭০, ৮০, ৯০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী রেখেছে। তারা ঠিকমত জনগণের কাজ করছে কিনা সেটা সরাসরি তাদেরকে কাছ থেকে জানার জন্য আমি হাজিরা নিচ্ছি। আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করছি তাদেরকে দেখা গিয়েছিল কিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানে। কারণ তাদের কাজটাই হচ্ছে পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করা এবং ওই জন্য তারা কর্পোরেশন থেকে টাকা নিচ্ছে। একেকজন প্রায় ১৪১৬ হাজার টাকা করে টাকা নিচ্ছে কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার যে মূল লক্ষ্য সেটা বাস্তবায়ন করছে কিনা তা দেখার জন্য প্রতিটা ওয়ার্ডে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, অলরেডি আমি পূর্ব বাকলিয়া গিয়েছি, পশ্চিম বাকলিয়া গিয়েছি। আজকে চকবাজার ওয়ার্ডে আমি এসেছি। এভাবে প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি এবং আমি গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনগণ যাতে ময়লা আবর্জনা রাস্তায় না ফেলে, নালার মধ্যে না ফেলে, বরং ডাস্টবিনে ফেলে এই গণসচেতনতা বৃদ্ধি করছি।

জনগণের উদ্দেশে মেয়র বলেন, কোনো জায়গায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আপনাদের সেবা দিচ্ছেন না সেটা আপনারা আমাদের জানাবেন, ব্যবস্থা নিব। ইনশাআল্লাহ জনগণের যে কোনো সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আপনারা জানেন ডেঙ্গুর জন্য প্রথমদিন থেকে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলা হয়েছে। যেখানে ডেঙ্গুর যে টেস্ট সেটি বিনামূল্যে করে দিচ্ছি। আমরা ওইখানে ১০টি বেড রেখেছি। যেকোনো সময় মুমূর্ষু রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবে।

নগরবাসীর সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমি হাজার হাজার কোটি টাকা জলাবদ্ধতা এবং পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার জন্য এবং মশা মারার জন্য যদি খরচ করে যদি জনগণকে সচেতন করতে না পারি তখন এই নগরকে আপনি সুন্দর রাখতে পারবেন না। এ জন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। এ শহর আমারআপনার সবার। ময়লা যথাস্থানে ফেলুন। প্রতি তিনদিনে ঘরে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ফেলে দিন। আসুন সবাই মিলে ডেঙ্গুর আতঙ্কমুক্ত থাকি।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী। শুরুতে মেয়র চকবাজার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেন এবং স্থানীয়দের কাছে তাদের কাজের পারফরম্যান্স জানতে চান। এরপর মেয়র চকবাজার এবং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়কের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। এসময় মেয়র ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ঢাকা এয়ারপোর্টে গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গাড়ি নামবে ইপিজেডে