বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেছেন, সুন্দর স্বপ্নে ভরা বই আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এসব বই একেকটি জ্ঞানের আধার। উন্নত জাতি গঠনে নতুন নতুন জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান ছাড়া একটি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম নগরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এতে নগরের ৯৩টি স্কুলের প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র–ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উৎসবে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ, সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী, রিহ্যাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল, গ্রামীণফোন চট্টগ্রাম সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সবসময় আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ২ হাজার ৪ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ১ হাজার ৬৭১ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১ হাজার ৭৪০ জন এবং সেরা পাঠক পুরস্কার পেয়েছে ৮৮ জন। বিজয়ী ৫ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরা পাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি পর্বে ১ জন অভিভাবককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির সাথে গ্রামীণফোন প্রায় দুই দশক ধরে আছে। গ্রামীণফোন চায় সারা বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ তৈরি হোক। কারণ গ্রামীণফোন বিশ্বাস করে আলোকিত মানুষ ছাড়া দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। এখন মাই জিপি অ্যাপের মাধ্যমে বই পড়া যাচ্ছে। এছাড়া জিপি একাডেমি ও গ্রামীণ এক্সিলেটর প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শুভার্থী ও সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভালো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারার মাঝেই আনন্দ। ভালো কিছুকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আলোকিত বাংলাদেশ গড়ব। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আলোর পথযাত্রী হিসেবে তোমরা আমাদের সাথে আছ, থাকবে। নিজের জীবনকে আলোকিত করার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি চাইব তোমরা সারাজীবন বইয়ের সাথেই থাকবে। রিহ্যাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভালো মানুষ না হলে কেউ আলোকিত মানুষ হতে পারে না। আর আলোকিত মানুষ হতে হলে আমাদের সবাইকে ভালো বই পড়তে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, তোমাদের মতো আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার সাথে যুক্ত ছিলাম।
উল্লেখ্য, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ছেচল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।