ওয়াসা এমডিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, পদত্যাগ দাবি

ওয়াসা ভবন ঘেরাওকালে দুই পক্ষের উত্তেজনা, হাতাহাতি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের দাবিতে আবারও সংস্থাটি ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে ওয়াসা ভবনে যান। এ সময় আন্দোলনকারীরা দোতলায় অবস্থিত এমডির দপ্তরের দিকে উঠতে গেলে গেটের বাইরে থেকে তাদেরকে ওয়াসার কর্মকর্তাকর্মচারীরা বাধা দেন। এ সময় ওয়াসার কর্মচারীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতি হয়। উত্তেজনা দেখা দিলে সেনাবাহিনী এসে দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেয়। ওয়াসার কর্মকর্তাকর্মচারীরা ভেতরে এবং আন্দোলনকারীরা বাইরে স্লোগান দিতে থাকেন। উভয়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর পদত্যাগ দাবিতে এক দফা কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী সচেতন নাগরিক সমাজ। গতকাল কার্যালয় ঘেরাও করে পদত্যাগ দাবিতে ‘দফা এক দাবি এক, ফজলুল্লাহরর পদত্যাগ’সহ নানা স্লোগানে কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ তার কার্যালয়ে ছিলেন। সরকারের কোনো নির্দেশনা ছাড়া তিনি পদত্যাগ করবেন না বলেও জানিয়ে দেন আন্দোলনকারীদের।

এর আগে বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করায় চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওয়াসার এমডির কার্যালয়ে সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে এমডির পক্ষে ওয়াসার ৩০৩৫ জন কর্মকর্তাকর্মচারী বাধা দেন এবং পাল্টা অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ওয়াসার এমডির সমর্থকদের তোপের মুখে পিছু হটেন আন্দোলনকারীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এর আগে গত রোববার দুপুরে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহর পদত্যাগসহ ১৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ। পরদিন সোমবার চার দফা দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেয় ওয়াসার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী দল।

আন্দোলনকারীদের দাবি অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরি করার সুবাদে আমি যদি আওয়ামী লীগের দোসর হই, পাঁচ বছর ধরে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্টে থাকা আপনিও তো (এসএম নাজের হোসাইন) আওয়ামী লীগের দোসর। আমি সরকারের চাকরি করি। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া কেউ এসে বললে আমি কীভাবে পদত্যাগ করব? আমি যদি দুর্নীতি করি তাহলে সরকারিভাবে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কেউ এসে বললে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। তখন সরকার আমাকে প্রশ্ন করবে, আমি কেন পদত্যাগ করেছি। সরকারের নির্দেশনা ছাড়া তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ : বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে ওয়াসার কর্মচারীরা হামলা করেছে। ওয়াসার আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো ২০৩০ জনের একটি দল এতে অংশ নেয়। এ সময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির বেদম প্রহর করে। আন্দোলনকারী ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দুপুরে সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব ঘোষিত ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে সমবেত হই আমরা। শান্তিপূর্ণভাবে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান করি। সেখান থেকে ওয়াসার এমডির কক্ষে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। তখন আমাদেরকে নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামে বিএনপির দুই নেতার সাথে কথা বলতে বলেন। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি সুর পাল্টে বিশৃঙ্খলার ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নাজের হোসাইন অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির অনেক দুর্নীতিঅনিয়ম আছে। তিনি প্রত্যেকটা প্রকল্পে অনিয়মদুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। ওয়াসার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা চিকিৎসকদের
পরবর্তী নিবন্ধডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ আগারওয়াল গ্রেপ্তার