ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার। নুরুল হক মাঝির বাড়ির বাসিন্দার ঘরে গত বৃহস্পতিবার পানি ঢুকতে শুরু করে। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পানি চার ফুট উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়। তখনই দ্রুত দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন যে, বাচ্চাকে কাপড় পরানোর সময় পাননি। ওই অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে আনা হয় নিকুনজরা পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের ডরমিটরিতে। পিএইচপি ফ্যামিলির পক্ষ থেকে দেওয়া কাপড় পরানো হয় দুই শিশুকে। কেবল তাসলিমা আক্তার নয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার মানুষের আশ্রয় মিলেছে এখানে।
নব্বই বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ১৮ বছরের তরুণরা যেমন এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তেমনি কিশোর–কিশোরী ও ছোট ছোট শিশুরাও এসেছেন। আছেন গর্ভবতী নারীও। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন তিনবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষকে চিকিৎসা দিতে রয়েছে ৬ জনের একটি মেডিকেল টিম। চিকিৎসা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে পিএইচপি ফ্যামিলির পক্ষ থেকে। পাচ্ছেন জামা–কাপড়ও। অর্থাৎ এখানে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের প্রয়োজন মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানের নিবেদিত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। কারখানা বন্ধ রেখে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সেবায় নিয়োজিত তারা। পাশাপশি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের কাছে পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ফেনী ও মীরসরাই এলাকায় বন্যার কবলে পড়লে কারকানা বন্ধা রেখে বানভাসি মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় কারখানার গেট। নিজস্ব একাধিক বোটে করে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তিনটি ভবনে আশ্রয় নিতে থাকে বন্যা কবলিত ঘরহারা মানুষ। তাদের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়, কাপড়, ওষুধ ও খাবার।
পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের প্ল্যান্ট ম্যানেজার বিন্দু নাথ জানান, ডরমিটরিসহ তিনটি ভবনে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও কাপড়ের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে প্রতিদিন আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। গতকাল সোমবার পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ে রয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। তাদের গত রবিবার পর্যন্ত তিনবেলা রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাবার। উষ্ণ পোশাক, নারীদের জন্য স্যানিটারি প্রোডাক্ট রাখা হয়েছে। ছয়জনের একটি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ওষুধের ব্যবস্থাও আমরা করেছি।
পিএইচপি ফ্যামিলির এই মানবিক উদ্যোগটি বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য একটি বড় সহায়তা হিসেবে এসেছে এবং সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে এখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। তারা বলছেন, এতগুলো মানুষকে এভাবে সব রকমের সেবা দেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক নীরবে কাজটি করে যাচ্ছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।