চবিতে বেড়েছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য

কর্মচারীদের সহায়তায় মাদক লেনদেন

ইমাম ইমু, চবি | সোমবার , ৮ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশের একাধিক পথ থাকলেও চেকপোস্ট রয়েছে কেবল জিরো পয়েন্ট ও দুই নম্বর গেইটে। এই দুই পথে বাধার মুখোমুখি হলেও নিয়মিত ভিন্নপথে অবাধে ক্যাম্পাসে ঢুকছে বহিরাগত ও মাদক। চবিতে এমন প্রায় পাঁচটি পথ রয়েছে যেগুলো দিয়ে মাদক প্রবেশ করে ক্যাম্পাসে। এসব পথে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কারণে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বসে মাদকের আসর। মাদকের জন্য নিরাপদ স্থান হলো আবাসিক হলগুলো। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসের সর্বত্রই বেড়েছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য। এতে প্রশাসনের তৎপরতা বরাবরের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ।

জিরো পয়েন্ট চেকপোস্ট থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বলে অনেকেই পার পেয়ে যায়। অধিকাংশ মাদক বহনকারীই হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা কর্মচারী। যার কারণে চাইলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না মাদক লেনদেন। এছাড়া নিয়মিতই বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে সহযোগিতা করেন ছাত্রনেতা ও কর্মচারীরা। যার কারণে ক্যাম্পাস এলাকায় ইয়াবাগাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন বেড়েছে।

সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই শহীদ আব্দুর রব হলের ছাদে, শাহ আমানত, শাহজালাল, সোহরাওয়ার্দী, এফ রহমান হলের চিহ্নিত বেশকিছু কক্ষে নিয়মিত বসে মাদকের আসর। এসব আসরে থাকেন বহিরাগত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। গত ২৬ মে রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী মিলে মদ ও গাঁজা সেবন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি অভিযান চালায়। উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ও মাদকের সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায় তারা। গত ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ৩৫৬ নম্বর রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, একজন বহিরাগত ও একজন কর্মচারী মিলে ইয়াবা সেবনের আসর বসান। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এমন সময় প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান তারা। রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও জানালা দিয়ে ইয়াবা সেবনের দৃশ্য দেখা যায়।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা দরজায় কড়া নাড়তেই হামাগুড়ি দিয়ে মোমবাতির আগুন নিভিয়ে আসর ভেঙে দেন তারা। পরে দরজা খুলে তাদের হাতেনাতে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ দৃশ্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের নয়, প্রায় প্রতিটি হলে বসে ইয়াবা সেবনের আসর। কেউ প্রতিবাদ করলেই দিতে হয় মাশুল। বের করে দেওয়ার হুমকি আসে হল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দীর্ঘদিন পদক্ষেপ না নেওয়ায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে এই পাহাড়ি ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় রয়েছে মাদকসেবীদের বিচরণ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চেয়ে বহিরাগতদের সংখ্যাই বেশি। সন্ধ্যার পরপরই কিছু লাইসেন্সবিহীন বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকেন বহিরাগতরা। একেকটি বাইকে তিন থেকে চারজন উঠলেও গতি থাকে বেপরোয়া, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলোতে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে।

অভিযোগ রয়েছে, বহিরাগত কিছু ছাত্রনেতার মদদে ক্যাম্পাসকে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানানো হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি হলের বিভিন্ন কক্ষে মাদক সেবন ও বিক্রি চলে। এ ছাড়া জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন রেললাইন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝুপড়ি, আব্দুর রব হলের মাঠেও বসে মাদক সেবনের আসর।

সর্বশেষ গত শনিবার দিনব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এসময় বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধারের পাশাপাশি প্রায় ৩০ জনের কাছ থেকে মোটরসাইকেলের চাবি ও আইডি কার্ড জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. অহিদুল আলম বলেন, মাদকের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। প্রায় প্রতিদিন আমাদের সহকারী প্রক্টরদের নেতৃত্বে ক্যাস্পাসের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের আমরা আটক করছি, সবাইকে পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের বিষয়ে আমরা একাডেমিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে মাদক নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীসহ আটক ৩০
পরবর্তী নিবন্ধআজ ১ মহররম হিজরি নববর্ষ