সুখেন্দু চক্রবর্তী (১৯২৮–১৯৮০)। খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী। সুরের আকাশে যিনি ‘খোকা চক্রবর্তী’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। সুখেন্দু চক্রবর্তীর জন্ম ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায়। তাঁর পিতার নাম নলিনী চক্রবর্তী আর মাতা হরসুন্দরী দেবী। সুখেন্দু চক্রবর্তী সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন বড় ভাই সত্য চক্রবর্তীর কাছে। পরে কুমিল্লার সঙ্গীত শিক্ষক সমরেন্দ্র পাল ও ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত চর্চা করেন। পাশাপাশি তিনি এস্রাজ, সেতার ও তবলাবাদনে পারদর্শিতা অর্জন করেন। রচনা করেছেন প্রচুর গণ সঙ্গীত ও আধুনিক গান। গীতিকার ফেরদৌস হাসান ভুঁইয়ার লেখা ‘ডিম পাড়ে হাসে, খায় বাঘডাসে’–এ জনপ্রিয় গানটির মধ্যদিয়ে ষাটের দশকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। সুখেন্দু চক্রবর্তী সভাসম্মেলনে বহু সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তিনি যেসব জনপ্রিয় গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেন, তার মধ্যে ‘বাংলার বুকে ওই মৃত্যুর কালো দূত’, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পৃথিবী হাতছানি মেরে ডাকছে’, ‘আমাদের হাতের মুঠি তাদের পিষে দলবে’, ‘ওরা নাকি আমাদের ক্ষেত আর খামারের সবুজের স্বপ্ন কেড়ে নিতে চায়’, ‘মানিক তোমার যুদ্ধে যাবে মাগো বিদায় দাও’ প্রভৃতি উল্লেলখযোগ্য। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক কাগমারী মহাসম্মেলনে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুবসম্মেলনে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মহাসম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যাপক সাড়া জাগান। তিনি খবরের কাগজওয়ালা, ফেরীওয়ালা, জেলে, কামার, কুমার, ছুতার ইত্যাদি পেশাজীবী মানুষের জীবনসম্পৃক্ত গান করেন। তবে সুখেন্দু চক্রবর্তী গণসঙ্গীত–শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অন্যান্য গানেও তাঁর সুরেলা কণ্ঠ ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর পারদর্শিতা এবং চিরায়ত বাংলা গানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ, দুইই তাঁকে সঙ্গীতগুরুর মর্যাদা দান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলে দীর্ঘদিন তিনি সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। সুখেন্দু চক্রবর্তী ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্দীপ্ত ছিলেন। ঊনষত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সংগ্রামী চেতনার গান পরিবেশন করেন। এ চেতনার স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। জনসাধারণকে সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত করা ছিল তাঁর সঙ্গীত–সাধনার এক প্রধান দিক। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।