মায়ের অপারেশন জনিত কারণে ডাক্তাররা এক ব্যাগ এ নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করে রাখতে বলেছিল। আমি জানি যে নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তবে এ রক্ত জোগাড়ের জন্য আমাদের পরিবারের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিধায় সে ব্যাপারে আমি মাথা ঘামালেও তেমন একটা জোর দিয়ে ঘামাইনি। ভেবেছিলাম মাত্র এক ব্যাগ রক্ত ওরা জোগাড় করে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত দেখলাম আমার ভাই ঝি অনেক কষ্টে এক ব্যাগ এ নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করেছে যেটি মায়ের অপারেশনের সময় প্রয়োজন হয়নি। আমরা উক্ত রক্ত ব্লাড ব্যাংকে রেখেছিলাম কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখে মধ্যে ওই রক্তটি ব্যবহার করতে না পারায় তা বায়েজাপ্ত হয়ে যায়। অপারেশনের দশ দিন পর মায়ের হিমোগ্লোবিন ৮ এ নেমে আসায় ডাক্তাররা প্রথমে এক ব্যাগ পরবর্তীতে দুই রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ লিখে দেয়। এ দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড়ের দায়িত্ব আমি কাউকে না দিয়ে নিজেই নিয়ে অনলাইনে রক্তের গ্রুপগুলো চষে বেড়ালাম এবং গ্রুপগুলোর এডমিনদের সাথে কথা বলে আমার মোবাইল নম্বর দিয়ে এ নেগেটিভ রক্তের জন্য গ্রুপের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করালাম। রক্তের গ্রুপগুলোতে দেয়ার সাথে সাথে আমার কাছে একেরপর এক ফোন আসতে থাকে, আমি তাদের সাথে মিনিটে মিনিটে কোঅপারেশন করতে থাকি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো রক্তের গ্রুপগুলোতে বেশকিছু ভালো মানুষ থাকলেও কিছু মানুষ আছে জোচ্চোর এবং প্রতারক। এরা প্রথমেই ফোন করে জানতে চায় রোগী আপনার কে হন। রক্ত কি এখনই দিতে হবে? আমরা তো দুইজন আছি আমরা তো অনেক দূর থেকে আসবো কিছু মোটর সাইকেল তেলের খরচ বিকাশের মাধ্যমে পাঠান। কিংবা আমি দূরে আছি আসার খচর পাঠান। যেহেতু নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে কষ্ট হবে কিংবা পাওয়া না যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে সেসব কথা চিন্তা করে কেউকেউ টাকা পাঠিয়েও দেয়। টাকা পাওয়ার পর তাদেরকে কখনও আর ওই নম্বরে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে রক্তের গ্রুপগুলোর এডমিনরা আমাকে আগেভাগেই সাবধান করেছিল বলেই আমি এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রক্ত প্রতারককে মৌখিকভাবে শাসাতে পেরেছিলাম এবং এদের খপ্পর থেকে বেঁচেছিলাম। যাই হোক এসব বদ মানুষ ছাড়াও চট্টগ্রামের রক্তের গ্রুপগুলোতে বেশকিছু অসাধারণ মানবিক ছেলে মেয়ে কাজ করছে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অপরিসীম সহায়তায় আমি ১৭ মে এবং ১৮ মে পরপর দুইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে আমার মায়ের জন্য দুই ব্যাগ এ নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে পেরেছি। এর জন্য বিশেষভাবে আমি ধন্যবাদ জানাবো রাঙ্গুনিয়া থানার পাশে কাউচার নগরের তৌহিদকে সে আমাকে এ দুই ব্যাগ রক্ত পেতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। আমার কলেজের হাসানকেও আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সে অনলাইনে শেষ সময় পর্যন্ত এক্টিভেট ছিল। তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাবধান করছি আপনারা রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তের গ্রুপগুলোর এডমিনদের সাথে কথা বলবেন। কেউ রক্তের জন্য টাকা চাইলে মনে করবেন সে প্রতারক।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলেজ শিক্ষক।