ঈদের কাপড় নিয়ে বাবা ঘরে ঢুকে বিছানার উপর রেখে বললেন যার যেটা পছন্দ নিতে। মাপের প্রয়োজন হয়নি কখনো। আমরা (আমি আর রিফাত)’র জন্য সাইজ বরাবর কিনতেন। তখনও তপু, ঐশী পৃথিবীতে আসেনি। মা, দাদীর জন্যও একই। দাদী চলে যাওয়ার পরও নিয়মের হেরফের হয়নি। বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন প্রতি বছর এভাবেই নতুন কাপড়ের গন্ধ শুঁকে অতৃপ্ত স্বাদ নিয়েছি। সেটা জীবনের পরম পাওয়া। শহর থেকে দুই ফুফু পাঠাতেন। হল্লা করে কোনওদিন মার্কেটে যাওয়া হয়নি। বাবাকে দেখেছি আবহমান কালের উনার বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে। ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর দাদার মুরিদরা এসে শিরনী খেতেন। ‘মা‘ মজাদার এটা–সেটা রান্না করতেন। সারাদিন চলতো একের পর এক আসা–যাওয়া। ঈদ কাটিয়ে দুই–তিন দিন পর প্রতি বছর নানাবাড়িতে অন্যরকম আনন্দ যোগ হতো ছোট–বড় সবাই মিলে। ভেদাভেদের ছিটেফোটা দেখিনি কখনো। একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতাম। ছোট–বড়, ধনী–দরিদ্র নির্বিশেষে ঈদগুলো ছিলো উদযাপনের। চোখে পড়েনি ধর্ম–জাতি ভাগ হতে। মামা, ভাই–বোন, ভাগ্নে–ভাগ্নী চলে যেতাম পরিচিতদের বাড়িতে বাড়িতে। ওরাও সাধ্যমতো আপ্যায়নের কমতি রাখেনি। আমাদের সময়কার ঈদ ছিলো এরকম। মানুষগুলোর বেশিরভাগ বেঁচে নেই। এই সময়ে কেন জানি আনন্দ হারিয়ে গেছে। তখন আজকের মতো এতো আধুনিক ছিলো না কিন্তু আনন্দ ছিলো। এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে সব আছে, সুখ নেই। ব্যস্ততা আর বাস্তবতা সবাইকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে বের হবারও সুযোগ নেই। তবুও বিগত বছরগুলোর ঈদে বাচ্চাদের খুশি দেখে কিঞ্চিৎ কষ্ট ভুলে থাকি। ওদের খুশিতে একাত্ম হই।